images

শিক্ষা

শিক্ষা সংস্কার কমিশনসহ ১১ দফা দাবি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির

নিজস্ব প্রতিবেদক

০২ মে ২০২৫, ০১:৫০ পিএম

শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস)।

শুক্রবার সকাল ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। 

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে হাত দিয়েছেন। এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ ও সুবিশাল কর্মযজ্ঞ। তবে এটির জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম, একনিষ্ঠ সাধনা আর নিরবচ্ছিন্ন সময়। রাতারাতি এই মহৎ কার্য সম্পাদন করা সম্ভব নয়, শুরু করাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে দুঃখের সাথে বলতে হয় ১১টি বিষয়ের ওপর ১১টি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে, কিন্তু শিক্ষার জন্য কোনো শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়নি, অথচ যেকোনো দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। 

আরও বলা হয়, আমরা জানি শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষক। দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী দ্বারা। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয় এই যে, একই কারিকুলাম ও সিলেবাসে পাঠদান করা হলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মাত্র এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা এবং পাঁচ শত টাকা চিকিৎসা ভাতা পেয়ে থাকেন। অবসরে যাওয়ার পরেও ৩-৪ বছরেও অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পাচ্ছেন না। উপরন্তু অন্যায়ভাবে বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে। ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ অথবা জিডিপি'র ৬ শতাংশ বরাদ্দ করার কথা থাকলেও ধারাবাহিকভাবে জিডিপির মাত্র ২ শতাংশের আশেপাশে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। বাকবিশিস মনে করে এই বরাদ্দ ন্যূনতম ৪ শতাংশ করলেই শিক্ষা খাতের বিরাজমান সমস্যার বিরাট অংশ সমাধান করা সম্ভব। 

শিক্ষকরা বলেন, নানা ধরনের শিক্ষার ক্রমবর্ধমান প্রভাবে সাম্প্রদায়িকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সমাজ, মধ্যযুগীয় পশ্চাৎপদতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে সমাজমানস। এজন্য শিক্ষকদের উপর সম্প্রতি নজিরবিহীন হামলা, লাঞ্চনা ও হয়রানি শুরু হয়েছে। বাকবিশিস চেতনাগত অবস্থান থেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। মুক্তবুদ্ধি ও সংস্কৃতি বিচ্ছিন্ন শিক্ষার পরিণাম হলো আজকের শিক্ষা পরিস্থিতি। বাকবিশিস এ অবস্থার অবসান চায়। বিজ্ঞানমনষ্ক, অসাম্প্রদায়িক, একমুখী, সর্বজনীন শিক্ষানীতির জন্য বাকবিশিস আজন্ম লড়ায় চালিয়ে আসছে। 

১১ দফা দাবিগুলো হলো-

১. শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ চাই, বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত সরকারিকরণ নয়। ইউনেস্কোর সুপারিশ মোতাবেক শিক্ষা খাতে জিডিপি'র ৬ শতাংশ বরাদ্দ করতে হবে।

২. সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদেরও শতভাগ উৎসবভাতা, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসাভাতা প্রদান করতে হবে।

৩. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ১১টি বিষয়ের ওপর গঠিত ১১টি সংস্কার কমিশনের ন্যায় শিক্ষা বিষয়ের ওপর শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।

৪. উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ এবং উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষকের পদ বাতিল করে পূর্বের ন্যায় সহকারী অধ্যাপকের পদ চালু করতে হবে।

৫. বেসরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্সসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করাসহ নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবিলম্বে এমপিওভুক্ত করতে হবে।

৬. বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় অবসর সুবিধা প্রদান করতে হবে। তবে এই বিধান না হওয়া পর্যন্ত অবসরে যাওয়ার তিন মাসের মধ্যেই কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর      তহবিলের টাকা প্রদান করতে হবে। অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।

৭. বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির জন্য দ্রুত নীতিমালা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। বেসরকারি কলেজে সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর করতে হবে।

৮. শিক্ষা প্রশাসনে বেসরকারি শিক্ষকদের আনুপাতিক হারে পদায়ন করতে হবে।

৯. অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্বের ন্যায় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করতে হবে এবং অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগও শিক্ষক নিয়োগের ন্যায় এনটিআরসিএ বা অন্য কোনো বিকল্প শিক্ষক নিয়োগ কমিশনের মাধ্যমে করতে হবে।

১০. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির জন্য শিক্ষকদের উপর অসত্য অপবাদ দিয়ে হামলা, লাঞ্চনা, হয়রানি ও চাকুরিচ্যুতি বন্ধ করতে হবে।

১১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। 

এএসএল/ইএ