images

শিক্ষা

‘পরাজিত শক্তি সম্প্রীতির বন্ধন বিনষ্ট করতে ষড়যন্ত্র করছে’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৬ পিএম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরাজিত শক্তি আবার ফিরে আসতে এদেশের হাজার বছরের সম্প্রীতির বন্ধন বিনষ্ট করতে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের এই ষড়যন্ত্রের সাথে হাত মিলিয়েছে আমাদের প্রতিবেশী আরেকটি দেশ। তাদের এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণী জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস কাজ করেছে। এর মধ্যে সরকার তাকে রাষ্ট্রদোহী মামলায় গ্রেফতার করেছে। আমাদের সমাজে যদি আরও চিন্ময় থাকে তাদেরকেও গ্রেফতার করতে হবে।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি পরিষদ (আসপ) আয়োজিত সম্প্রীতির বন্ধন শীর্ষক মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্য ঢাবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান জামিলুন্নেছা বলেন, ‘আমরা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই মানুষ হিসাবে এই দেশে জন্মগ্রহণ করেছি। এদেশ আমাদের সবার। আমরা সবাই মিলে এই দেশকে গড়ব। কোনও অপশক্তির ষড়যন্ত্রে সম্প্রতি বিনষ্ট করে দেশের অগ্রগতি থামানো যাবে না।’

ঢাবির বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আবু সায়েম সরকারে প্রতি আহ্বান রেখে বলেন, ‘যদি কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেশের হাজার বছরের সম্প্রতি বিনষ্ট করতে চায়, তবে তাদের কঠিন ভাবে দমন করতে হবে। প্রতিবেশী দেশের চোখ রাঙানিতে পিছপা হওয়া যাবে না।’

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ঠু বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরাজিত শক্তিরা থেমে নেই। তাদের কাজ সব সময় ষড়যন্ত্রের সঙ্গে বসবাস করা। তারা দেশের দুই সহস্রাধিক মানুষ খুন করেছে। শত শত মানুষ গুম করেছে। তারা আবার ফিরে আসতে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট করতে ষড়যন্ত্র করছে। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে।’

sampreti

ঢাবির সাবেক অধ্যাপক সুকুমল বড়ুয়া বলেন, ‘এই দেশে হাজার বছরের যে সম্প্রতি চলছে সেটি বিনষ্ট হবে না। এটা আমাদের দেশ, আমরা এ দেশেই থাকব। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই এদেশে থাকব। যারা দেশের পরাজিত শক্তি তারা পালিয়ে গেছে। এই অশুভ শক্তি এখন দেশের ধর্মীয় সম্প্রতি বিনষ্ট করতে চাচ্ছে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। আমরাই এদেশে থাকব। আওয়ামী পতিত সরকারের অপপ্রয়াস এদেশের আর টিকবে না।’

সভাপতির বক্তব্যে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম এ মজিদ বলেন, ‘৫২ বছরের ইতিহাসে আমাদের প্রতিবেশী দেশ কখনও আমাদের ভালো করেছে বলে মনে হয় না। যখনই দেশে স্থিতিশীলতা আসে, এগিয়ে যাই —তখনই ষড়যন্ত্র করে আমাদের থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা কারও প্ররোচনা আর ষড়যন্ত্রে পা দেব না। স্বাধীনতার চেতনা আর সম্প্রীতির বন্ধনে আরও এগিয়ে যাব। আর এই সম্প্রীতির বন্ধনে বিভেদ সৃষ্টি করতে যারা ষড়যন্ত্র করবে তাদের এই দেশে জায়গা হবে না।’

আরও পড়ুন

ইসকনের নামে আওয়ামী লীগ নতুন করে আসার চেষ্টা করছে: হেফাজত

এসময় মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ–ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু, জাতীয়তাবাদী দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য দেবাশীষ রায় কুন্ডু, পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বসু, পূজা উদযাপন কমিটির দফতর সম্পাদক গোবিন্দ কুন্ডু, গিওর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (অব) জীবন কুমার সাহা প্রমুখ।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য দেবাশীষ রায় মধু বলেন, ‘আমরা কিছুদিন ধরে দেখছি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র আমাদেরকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। যুগ যুগ ধরে আমরা শান্তিমতো বসবাস করছি। আমাদের সম্প্রীতি কেউ নষ্ট করতে পারবে না। আমরা সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে দেশ গড়ব। আমরা সংখ্যালঘু নই, আমরা এ দেশের নাগরিক।’

সাবেক ছাত্রদল নেতা সুরঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘দেশের সংকট যখন ঘনীভূত হয় তখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির পাশে এসে দাঁড়ায়। আমরা এরশাদকে হটিয়েছিলাম, হাসিনাকেও সরিয়েছি। তাই তারা এখন সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তারা আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। তাদের সফল হতে দেওয়া যাবে না। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন।’

জগন্নাথ হল ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক এবং হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ স্ট্রাস্টের ট্রাস্টি সমীর কুমার বসু বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের দিয়ে এদেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে ভারত সরকার। চিন্ময় প্রভুপাদকে প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করিয়ে দিয়ে দেশকে অস্থীতিশীল করতে চায়। এ দেশে কোনো সংখ্যালঘু নেই, কোনো সংখ্যাগুরু নেই, আমরা সবাই বাংলাদেশি।’

সমাবেশে আজমীর হোসেন পাইলট বলেন, ‘বিএনপির বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যখন আহত হন, বিশ্বজিৎকে যখন কুপিয়ে আহত করা হয় তখন ভারতের বিবৃতি দেখা যায় না, যখনই তাদের তাঁবেদার পালিয়ে গেল, তখনই তারা অস্থিতিশীল করার প্রয়াসে লিপ্ত হলো।’

আরএ/জেবি/এমএইচটি