২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হলো কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের মধ্যবর্তী শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ (২২ নভেম্বর) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছরে পা রাখছে। শিক্ষা-বিনির্মাণে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা এই বিদ্যাপীঠে বর্তমানে ৮টি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগে প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি ও ভাবনাগুলো তুলে ধরেছেন ঢাকা মেইলের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক।
সেশনজট: এক দানবীয় অভিশাপ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের আলোকিত করে না, একটি জাতিকে আলোকিত করে। এটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে আমরা জ্ঞান অর্জন করি, বন্ধু তৈরি করি এবং ভবিষ্যৎ গঠন করি। তবে, প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর পরেও বিশ্ববিদ্যালয়টি নানা সমস্যায় জর্জরিত। সেশনজট অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে শিক্ষার্থীদের জীবনকে হতাশায় পরিণত করছে। সেশনজট যেন এক দানবীয় অভিশাপ, যা শিক্ষার্থীদেরকে আরো অনেক সমস্যার সম্মুখীন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে একটি একটাই দাবি জানাচ্ছেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা ফিরে পাওয়ার পথে প্রধান অন্তরায়গুলো সমাধান করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি মডেল হিসেবে গড়ে তুলুন।
—রবিউল ইসলাম বিভাগ-ইংরেজি
শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ আবাসিকতার সুযোগ প্রদান
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, যা দেশের প্রথম স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, মোহনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা। প্রতিটি ঋতুতে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য যেন নতুন রূপ ধারণ করে। নির্মল প্রকৃতির শোভিত প্রাণের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত ভালোবাসার বসন্ত অনুভব করেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়টি আরো শিক্ষার্থীবান্ধব হবে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ আবাসিকতার সুযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
—আজিজুল ইসলাম, বিভাগ-ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ
চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা থাকলেও যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যেমন আনন্দিত, তেমনি কিছু প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়। সেশনজট, আবাসন সংকট, বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসনের সমস্যা, এবং চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থায় ঘাটতি—এগুলো তাদের কল্পিত ভাবনা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। তবে এসব সমস্যার মধ্যে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনও ঘটেছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য আশাপ্রদ। ভবিষ্যতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেবে—এমন প্রত্যাশা প্রতিটি শিক্ষার্থীর হৃদয়ে বিরাজমান।
—আফরিন আক্তার মৌ, বিভাগ-ইংরেজি
গুণে-মানে শীর্ষে থাকার কথা থাকলেও ইবি এখনও পিছিয়ে
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭৯ সালে ধর্মতত্ত্ব বিভাগ দিয়ে এর যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে আরো বেশ কিছু বিভাগ চালু হয়। তবে দুঃখজনকভাবে, স্বাধীনতার পর প্রথম প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি আজও অনেক দিক থেকে পিছিয়ে। শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা, হলের নিম্নমানের খাবার, সেশনজট—এসব সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যমান। অনেক বিভাগে শিক্ষার্থীদের সম্মাননা শেষ করতে ৫-৬ বছর লেগে যায়, যা শিক্ষার্থীদের সময়ের অপচয়। শিক্ষকদের অবহেলা এবং শিক্ষক সংকটও সেশনজটের অন্যতম কারণ। তবে, কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনও এসেছে, যেমন নতুন আবাসন ব্যবস্থা এবং একাডেমিক ভবন নির্মাণ। আমি আশা করি, একসময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াবে এবং শীর্ষ তালিকায় থাকবে।
—শেখ ছামিউল ইসলাম, বিভাগ-হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি
যেমন দেখতে চাই আমার বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে একজন নবীন ছাত্রী হিসেবে আমার অনেক আশা ও আবেগ রয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা সেশনজট, যা শিক্ষার্থীদের অনেক ভোগান্তির কারণ। উচ্চমানের শিক্ষক নিয়োগ এবং যথাযথ পাঠদান কার্যক্রমের মাধ্যমে সেশনজট কমানো জরুরি। এছাড়া, প্রাসঙ্গিক শিক্ষাব্যবস্থা যা চাকরি ও উচ্চতর গবেষণায় সহায়ক হবে, তাও নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নও অত্যন্ত জরুরি। আমি আশাবাদী, এসব সমস্যার সমাধান হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন হবে।
—ফারাহানা লিমু, বিভাগ-ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছরে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তবে, এখনও কিছু সমস্যা রয়েছে—যেমন শ্রেণীকক্ষ ও শিক্ষক সংকট, ভর্তি সংক্রান্ত ভোগান্তি, সনদ উত্তোলনে জটিলতা, আবাসিক সিটের সংকট ইত্যাদি। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব সমস্যার সমাধান করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশ ও বিশ্বের বুকে আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
—সাদিয়া আফরিন মৌ, বিভাগ-ল' এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট
প্রতিনিধি/একেবি