images

শিক্ষা

ক্লাস ছেড়ে পার্কে-মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা, বাড়ছে শঙ্কা

কাজী রফিক

০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩৯ পিএম

  • সকাল থেকে পার্ক, বিনোদন কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের ঢল নামছে
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পোশাকে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিকটু চলাচল
  • নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা বাড়ছে

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পোশাক পরে বাসা থেকে বের হয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। মাঝপথেই বদলে যায় গন্তব্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে চলে যায় পার্কে। কারও কারও দেখা মিলেছে উন্মুক্ত স্থান ও নদীর পাড়ে। দৃষ্টিকটু চলাফেরা, ধূমপান যেন তাদের স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টদের নজর না থাকায় দিন দিন পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে স্কুল-কলেজের পোশাকে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা বাড়ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের জিয়া উদ্যান এলাকা সকাল থেকেই থাকে জমজমাট। দর্শনার্থীদের দিকে নজর দিতেই দেখা যায় স্কুল-কলেজ পোশাকধারীদের। কেউ কেউ এসেছেন দলবদ্ধভাবে, কেউবা যুগলবন্দি।

গণমাধ্যমকর্মী পরিচয়ে কথা বলতে চাইলে এই প্রতিবেদককে এড়িয়ে যায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

জিয়া উদ্যান এলাকার হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগত শিক্ষার্থীরা আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উদ্যান এলাকায় অবস্থান করা দর্শনার্থীদের একটি বড় অংশই শিক্ষার্থী।

অবস্থা আরও ভয়ানক আকার ধারণ করেছে নগরীর পশ্চিম তীরে। ঢাকার পশ্চিমে তুরাগ নদের তীরে কয়েক বছর আগেই গড়ে উঠেছে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ। অবসর কাটানোর এসব জায়গা এখন জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

student2

তুরাগের চন্দ্রিমা মডেল টাউন অ্যাভিনিউ-১ এলাকায় দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের ঢল। স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্যমতে, প্রতিদিন সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের আনাগোনা থাকে এ এলাকায়। শিক্ষার্থীদের একাংশ ছোট রেস্তোরাঁগুলোর সামনে চেয়ার পেতে বসেন। কেউ আবার নদের তীরে গড়ে তোলা ওয়াকওয়েতে সময় কাটান। এসব শিক্ষার্থীদের প্রায় সকলেই আসেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পোশাকে।

অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই ওয়াকওয়ের সামনে দাঁড়িয়েই ধূমপানে মেতে ওঠেন। নারী শিক্ষার্থীদের ধূমপানের স্থান হয়ে উঠেছে পাশের একটি রেস্তোরাঁ। রিভারিয়া নামের ওই রেস্তোরাঁর একাংশে রাখা হয়েছে উন্মুক্ত স্থান। যেখানে সকলের ধূমপানের অনুমতি আছে, যার সুবিধা নিচ্ছেন নারীরাও।

সরেজমিনে দেখা যায়, তিন নারী শিক্ষার্থী এবং এক পুরুষ শিক্ষার্থী একটি টেবিলে বসে আছেন, যাদের সকলের হাতেই সিগারেট। শিক্ষার্থীদের পোশাকে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লোগো বলছে, তারা ঢাকা উদ্যান সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী।

গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় এড়িয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ হয় তাদের। জানা যায়, তারা প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আড্ডা দেন এই রেস্তোরাঁয়।

student1

রিভারিয়া রেস্তোরাঁর একজন কর্মী পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘তারা সব সময় আসে। প্রায় দিন সকালেই আসে কলেজ ড্রেসেই। মাঝে মধ্যে আবার রাতেও আসে।’

এই কর্মী বলেন, ‘তাদের মতো অনেকেই আসেন। সবাই স্টুডেন্ট। কলেজ ড্রেসে আসে, স্কুল ড্রেসেও আসে।’

একই চিত্র দেখা গেছে ধানমণ্ডি ৭/এ সড়কের রবীন্দ্র সরোবরে। স্থানীয় একজন হকার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, সরোবরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। তবে সকালে থাকে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা।

বিষয়টিকে সমাজের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক এ বিষয়ে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্ম পড়া, কিংবা এ রকমও তথ্য আছে, অন্যত্র ইউনিফর্ম চেঞ্জ করে, ঘরোয়া পোশাক পড়ে ছেলে বন্ধু বা মেয়ে বন্ধুর সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আড্ডা দিচ্ছে; এটাকে আমরা দোষ হিসেবে দেখছি না। কিন্তু সেটি যদি স্কুল পালিয়ে হয়, কলেজ পালিয়ে হয়, অভিভাবককে না জানিয়ে হয়, তাহলে এর একটি প্রভাব আমাদের সমাজে রয়েছে।’

student3

সহকারী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘অনেকে স্কুল বা কলেজের ক্লাস শেষ করেই আসে। কিন্তু অতিরিক্ত ক্লাস, টিউশনির নাম করে তারা আসে। এখানে শুধু গঠনমূলক আড্ডা থাকছে না। কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো থাকছে না। সে একটা প্রেমের সম্পর্কের কারণে নীরবে সময় কাটাতে আসে। এ সময় কাটানোকে অসামাজিক আচরণ কিংবা নীতি-নৈতিকতা বহির্ভূত আচরণ তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়।’

এই শিক্ষার্থীরা মাদকে জড়িয়ে পড়ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে মাদকে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। একজন যখন মাদকে সম্পৃক্ত, তখন অন্যদেরও এতে সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়।’

তৌহিদুল হক বলেন, ‘সে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বা সমাজবিরোধী যৌন সম্পর্ক তৈরি করার ফাঁকফোকোর গুলোকে কাজে লাগাবে। এতে সে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সমাজের মধ্যেও অবগঠনমূলক পরিস্থিতি তৈরি হবে, যা অন্যদেরকে বিপথে যাওয়ার মতো পথ তৈরি করে দিতে পারে।’

এখানে বিষয়টি শুধু সময় কাটানোর পর্যায়ে নেই উল্লেখ করে সমাধানের পথ হিসেবে কয়েকটি ধাপে তদারকির গুরুত্বারোপ করেছেন এই গবেষক। তিনি বলেন, ‘অতীতে আমরা ঢাকার বাইরে বিভিন্ন পার্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখেছি। কিন্তু সে তৎপরতা সারাদেশব্যপী শুরু করা সম্ভব হয়নি। এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতা দরকার। তারা যতদূর সম্ভব মনিটরিং করবেন, অভিভাবকরা খোঁজ রাখবেন, তাদের সন্তানরা কখন কোথায় যাচ্ছেন, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্ব নিতে হবে।’

কারই/এমএইচটি