images

শিক্ষা

দৃশ্যমান হচ্ছে ঢাবির শতবর্ষী মনুমেন্ট

ঢাকা মেইল ডেস্ক

২৫ আগস্ট ২০২৩, ০৮:২৩ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শতবর্ষ পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে ‘শতবর্ষী মনুমেন্ট’ স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে মনুমেন্টের দক্ষিণে জল উদ্যানের অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। তবে লোহার পাতে তৈরি মূল মনুমেন্টের কাজ এখনও প্রাথমিক অবস্থায়। দৃশ্যমান হয়েছে মনুমেন্টের দক্ষিণ ব্লকের ১০টি প্যানেলের কাজ, যেখানে মোট ২০টি ভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, গৌরব ও সংগ্রামের ঘটনাগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণী প্রকাশ করা হবে।

শুক্রবার (২৫ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর প্রদক্ষিণ করে দেখা যায় শতবর্ষী মনুমেন্টের কাজ বেশ তোড়জোড় করেই চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নভেম্বরের মধ্যেই মনুমেন্টের কাজ সম্পূর্ণ শেষ করা সম্ভব হবে। এর পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট এক ইঞ্জিনিয়ার ঢাকা মেইলকে বলেন, নানান জটিলতায় প্রকল্পের কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে আমাদের। প্রকল্প মেয়াদ জুন পর্যন্ত থাকলেও পরবর্তীতে এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া কাজ তাড়াতাড়ি বুঝিয়ে দিতে তাড়া করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমন কি এজন্য যদি একসাথে দ্বিগুণ সংখ্যক শ্রমিকেরও প্রয়োজন হয় তাও করতে বলা হচ্ছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। নভেম্বর মাসের মধ্যে এর কাজ শেষ করতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

এর আগে, গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

du

মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে মল চত্বরকে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর হিসেবে বিনির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ল্যান্ডমার্ক মনুমেন্টের স্থাপত্য নকশায় একটি অসীম চিহ্নের অর্ধেক আকৃতির কথা বলা হয়েছে যেখানে মুক্ত চিন্তা ও যুক্তির আসর বসবে। শিক্ষার্থী-শিক্ষক-পথচারীরা বিভিন্ন উৎসবে সেখানে উৎসাহ নিয়ে আসবেন, বই পড়বেন, স্বাধীনতা উদযাপন করবেন। মনুমেন্টের বিভিন্ন স্থানে বসানো ১০০টি বাতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবান্বিত শতবছর, নবচেতনা, জ্ঞান, উদারনীতি, বিপ্লব, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ধর্মনিরপেক্ষতা, একতা এবং ত্যাগকে প্রতিনিধিত্ব করবে।

২১ কোটি টাকার এই সৌন্দর্য প্রকল্প যেন মল চত্বরে অবস্থিত গাছের কোনো ক্ষতির কারণ না হয় সেই বিষটা বিবেচনায় রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মনুমেন্টের সামনে দক্ষিণের একটি ব্লকে চত্বরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ‘জল-উদ্যান’ নির্মাণ করা হবে। জলাধারে পানির মান নিয়ন্ত্রণে দুই প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট পরিশ্রবণ ট্যাঙ্ক থাকবে। এ ছাড়া জলাধারের পানির উচ্চতা একই রাখার জন্য একটি ব্যাল্যান্স-ট্যাঙ্ক করা হবে। জল-উদ্যানে শুষ্ক মৌসুমে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য পার্শ্ববর্তী কলাভবনের বিদ্যমান গভীর নলকূপের সঙ্গে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সর্বোপরি জলাধারের পানির গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের জন্যে ফোয়ারা, মাছ ও নির্দিষ্ট প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ ব্যবহার করা হবে। ফোয়ারা, মাছ, নুড়িপাথর ও শাপলা ফুলের এই বৃত্তাকার স্থানটিকে ঘিরে বসার ব্যবস্থা থাকবে।

du

মনুমেন্টের মূল ম্যাটারিয়েল প্যালেট নির্বাচন করা হয়েছে weathered steel এবং এর সাথে মিল রেখে মনুমেন্টের বেদীতে ব্যবহার করা হবে লাল কংক্রিট। লোহার পাতে তৈরি মনুমেন্টের মূল স্থাপনাটি (দৈর্ঘ্য ৭০ ফুট, প্রস্থ ৩০ ফুট ও উচ্চতা ২৫ ফুট) সম্পূর্ণভাবে খোলামেলা হবে যেন এটি প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে পারে। weathered steel —এ নির্মিত হওয়ায় এই কাঠামোটিতে নতুন করে জং ধরার সম্ভাবনা থাকবে না। তাছাড়া, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতির ফলে এটি অবহেলিত হওয়ার সম্ভাবনা যেমন কম, তেমনি সময়ের সাথে সাথে খুবই সীমিত রক্ষণাবেক্ষণে মনুমেন্টটিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। প্রকৃতির প্রতি সংবেদনশীল এই প্রস্তাবনাটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে চত্বরের বিদ্যমান বৃক্ষরাজি কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যথাযথ, ডিজিটাল ও ফিজিক্যাল সার্ভের মাধ্যমে সকল গাছের অবস্থান, আকৃতি, কাণ্ড ও পাতার ব্যাপ্তি শনাক্ত করেই সকল নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। নকশা প্রণয়নের পর তা আবার সাইটে লে-আউট করার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যাতে বিদ্যমান বৃক্ষরাজির কোনো ক্ষতি না হয়। পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য অল্প যত্নে টিকে থাকে এমন আরও ১ হাজার নতুন দেশজ উদ্ভিদ রোপণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বৃক্ষ-গুললতা গুলো নির্বাচন করা হয়েছে, যেগুলো মূলত সৌন্দর্যবর্ধন করার কাজে ব্যবহার করা হয়। স্বল্প পরিচর্যায় যে গাছগুলো এই পরিবেশে টিকে থাকতে পারে কিন্তু সুন্দর এরকম গাছ রোপণ করার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। এখানে বিদ্যমান ৭০০ গাছ রয়েছে তার সাথে নতুন রোপণকৃত গাছগুলো মল চত্বরের শোভা বৃদ্ধি করবে।

মল চত্বরে জলনিষ্কাশন পদ্ধতি প্রাকৃতিক ঢাল তৈরির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে, যা চত্ত্বরসংলগ্ন বিদ্যমান ড্রেনেজ সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় ভ্যাডোস-জোন বর্ষা মৌসুমে অভিপৃক্ত থাকে, তদুপরি ঢাকাতে ‘রিচার্জ পিট’ এর ধারণা এখনও গবেষণা ও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। ফলে পানি পরিশ্রবণের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের সাথে আলোচনাক্রমে রিচার্জ পিট করার পরিবর্তে জল-উদ্যান সংলগ্ন পরিস্রাবণ ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

চারুকলা অনুষদের ডিন ও এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করতে পারি নাই। প্রকল্প স্থানে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে এবং আমদের অর্থ ছাড়টা যথাসময়ে হয়নি। যার ফলে প্রাথমিক অবস্থায় কাজের গতি কমে গেছে। তারপরও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে নভেম্বরের মাঝে এর কাজ শেষ করে ডিসেম্বরে উদ্বোধন করার।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে বৃহৎ পরিসরে এর উদ্বোধন করার। তবে এখন পর্যন্ত কাকে দাওয়াত করা হবে এর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

প্রতিনিধি/এমএইচটি