images

শিক্ষা

চলতি বছর কি পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ এপ্রিল ২০২২, ০৭:৫৬ এএম

প্রায় দুই বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। ক্লাস হচ্ছে নিয়মিত। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আগের সেই চঞ্চলতা, উদ্যম ফিরে এসেছে। কিন্তু চলতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি, ইবতেদায়ি সমাপনী ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা হবে কি না সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। 

পূর্বের নিয়মে এ বছর উল্লেখিত পরীক্ষাগুলো হওয়ারই কথা। কিন্তু গত দুই বছর করোনাভাইরাসের কারণে পরীক্ষাগুলো না হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া নতুন যে শিক্ষাক্রমের রূপ রেখা অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানেও পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা রাখা হয়নি। তবে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে হবে ২০২৪ সাল থেকে। তাহলে বাকি দুই বছর অর্থাৎ ২০২২ ও ২০২৩ সালে পরীক্ষা হবে কি না সে বিষয়টি এখনও অস্পষ্ট। 

গত বছরের শেষ দিকে নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ বছর থেকে পাইলটিং শুরু হয়েছে, আগামী বছর থেকে তা বাস্তবায়ন করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষার বিধান রাখা হয়নি। ধাপে ধাপে ২০২৪ সালে অষ্টম শ্রেণি ও ২০২৫ সালে পঞ্চম শ্রেণি এই শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী ২০২৪ সাল থেকে জেএসসি ও জেডিসি এবং ২০২৫ সাল থেকে পিইসি ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা থাকছে না।

অভিভাবকরা বলছেন, গত দুই বছর পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা হয়নি। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম চালু করতে যে তিন-চার বছর বাকি আছে, সে সময়েও পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা না নেওয়া হোক। আর এ বছর যদি পরীক্ষা নেওয়া হয়েই থাকে, তা আরো আগেই জানানো উচিত ছিল। কারণ নভেম্বরে এসব পরীক্ষা নেওয়া হয়। এখন এপ্রিল মাস চলছে। আবার না নেওয়া হলেও ঘোষণা দেওয়া উচিত। তাহলে শিশুদের বাড়তি প্রস্তুতি নিতে কষ্ট করতে হবে না।

পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা নিয়ে মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলো সিদ্ধান্ত নিতে না পারলেও তারা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। এরই মধ্যে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। চলতি মাসেই তা শেষ হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা এখনই পিইসি ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষার ব্যাপারে ভাবছি না। কভিডে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা আমরা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। বাড়তি ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতি পোষাতেই ২০ রমজান পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখা হচ্ছে। আরো পরে আমরা পরীক্ষা নিয়ে ভাবব। ’

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘জেএসসি পরীক্ষার ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো আমাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে আমরা জেএসসির শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করছি। ’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী বলেন, ‘কভিড-পরবর্তী সময়ে যেখানে নতুন চিন্তা-ভাবনা দরকার, সেখানে পুরনো পথে হাঁটলে চলবে না। পরীক্ষার ওপর জোর দেওয়ায় শিক্ষায় অনেকে ক্ষতি হয়েছে। পরীক্ষা বাদ দিয়ে ক্ষতি পোষাতে আমাদের ভিন্ন পরিকল্পনা করা উচিত। মূল্যায়ন হতে হবে শ্রেণিভিত্তিক ধারাবাহিক, নতুন শিক্ষক্রমের রূপরেখায় আমরা যার প্রতিফলন দেখেছি। এখন এই রূপরেখা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। ’

জানা গেছে, পিইসি ও জেএসসি কোনো পাবলিক পরীক্ষা নয়। ফলে এসব পরীক্ষার ব্যাপারে কোনো আইন নেই। মন্ত্রিসভার নির্বাহী সিদ্ধান্তে ২০০৯ সাল থেকে পিইসি এবং ২০১০ সাল থেকে জেএসসি পরীক্ষা শুরু হয়।

রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘বছরের শুরু থেকেই পঞ্চম শ্রেণিতে পুরো ক্লাস হচ্ছে। এ জন্য আমার ছেলেকে স্কুলের দুজন শিক্ষকের কাছে কোচিং করাচ্ছি। রাতে বাসায় আরেকজন টিচার এসে পড়ান। স্কুল, কোচিং আর প্রাইভেট মিলিয়েই তার দিন-রাত পার হয়ে যায়। পিইসি পরীক্ষা না থাকলে আমার ছেলেকে এত কষ্ট করতে হতো না। ’

রাজধানীর কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘স্কুল খোলার দিন থেকেই পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পুরো ক্লাস হচ্ছে। তাই আমরা এ দুই শ্রেণিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে বছরের চার মাস পার হতে চললেও এখনো পরীক্ষার ব্যাপারে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। অভিভাবকরাও জানতে চাচ্ছেন, পরীক্ষা হবে কি না। যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক, তা আগেভাগেই জানানো উচিত। ’

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাচ্চাদের জন্য বড় একটি বোঝা। এ জন্য শিক্ষার্থীদের আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয়, বড় ধরনের মানসিক চাপ নিতে হয়। এই পরীক্ষা ঘিরে বাণিজ্যেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়। গত দুই বছর এই পরীক্ষা হয়নি। এতে বাচ্চাদের বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। আমরা চাই, এ বছর থেকেই এই পরীক্ষাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হোক। ’

করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ১৮ মাস পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে গত ২১ জানুয়ারি আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর মাধ্যমিক থেকে ওপরের দিকে প্রতিষ্ঠান খোলা হয় ২২ ফেব্রুয়ারি। আর প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হয় ২ মার্চ। এর পর থেকে প্রায় পুরোদমেই চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

একেবি