নিজস্ব প্রতিবেদক
০১ জুন ২০২৩, ০৬:৩৩ পিএম
২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৪৯ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে চলতি অর্থবছরে ছিল ৪৪ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই খাতে ৪ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে এই প্রস্তাব পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
মন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধাদির অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে পল্লী ও নগরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও সংরক্ষণ করছি আমরা। বিগত ১৪ বছরে পল্লী অঞ্চলে ৭৪ হাজার ৭০২ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ৪ লাখ ৩০ হাজার ১৯৭ মিটার নতুন ব্রিজ, ১ হাজার ৭৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, ৩৯৯টি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবননির্মাণ/ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৮৪২টি গ্রোথ সেন্টার ও হাট-বাজার, ১ হাজার ৪৬৫টি সাইক্লোন সেন্টার, নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিগত ১৪ বছরে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় দৃশ্যমান উন্নতি সাধিত হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সমগ্র দেশের গ্রামাঞ্চলে মোট ১০ লাখ ১৩ হাজার ২০০টি আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানির উৎস, পৌর এলাকায় ১ হাজার ৪৬১টি উৎপাদক নলকূপ, ১৫৯টি পানি শোধনাগার, ১৭ হাজার ৩০২ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন/প্রতিস্থাপন এবং ১ হাজার ১২ কিলোমিটার ড্রেন ও ৬৯টি উচ্চ জলাধার স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসার সিস্টেম লস ২০০৯ সালে ছিল ৪০ শতাংশ। যা বর্তমানে ২২ দশমিক ২৯ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সার্বক্ষণিক ও নির্ভরযোগ্য পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা এবং স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠী, বস্তিবাসীসহ সকল নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহের উদ্দেশ্যে ঢাকা ওয়াসার মাধ্যমে ‘ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী ওয়াসা বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকার নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহ করছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ ভাগ নগর এলাকায় (সিটি কপোরেশন ও পৌরসভায়) বাস করে। আধুনিক নগর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বিগত ১৪ বছরে নতুন ৫টি সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নগর এলাকায় সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরাপদ পানি সরবরাহ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন, আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ও প্রাথমিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে নতুন ও পুরাতন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। বিশেষ করে, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো কর্তৃক প্রদত্ত সেবাসগুলোকে অনলাইনভিত্তিক করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ঢাকার ২৬টি খালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসা থেকে দুই সিটি করপোরেশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। খালের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ খাল পুনরুদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ‘খাল পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি’ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যা ২০২২-২৬ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। চট্টগাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩৬টি খাল পুনঃখনন এবং ২৪টি খাল পাড়ের রিটেইনিং ওয়াল এবং ৫৪টি ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন এবং ৩২৯টি পৌরসভায় উৎপাদিত বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে উন্নত দেশগুলোকে অনুসৃত আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি অনুসরণে পরিবেশবান্ধব বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ/জ্বালানি ক্ষেত্রভেদে জৈবসার উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, আত্মকর্ম সৃজন উপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতির সক্রিয়তা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ফলে সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধিসহ জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটছে। এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কৃষিপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে সমবায়-ভিত্তিক মার্কেটিং অ্যান্ড ভেলু চাইনা ডেভেলপমেন্ট অব এগ্রিকালচারাল প্রোডাক্টস থ্রো কোঅপারেটিভস’ শীর্ষক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিএইচডি/এইউ