ঢাকা মেইল ডেস্ক
০১ জুন ২০২৩, ১২:০৯ পিএম
বাজেট ঘোষণার দিন বিশ্বের সব দেশের অর্থমন্ত্রীকে ব্রিফকেস হাতে দেখা যায়। সেই ব্রিফকেস খুলে বাজেট বক্তৃতার লিখিত কপি পড়া হয়। কেন ব্রিফকেস নিয়ে বাজেট পেশ করতে যাওয়া হয়, এ নিয়ে রয়েছে একধরনের কৌতূহল। কবে থেকে এই ব্রিফকেসের রীতি শুরু হয়েছিল, তা নিয়েও রয়েছে নানা মত।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেন ১৯৭২ সালের ৩০ জুন। একই সঙ্গে ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। তখনো তার হাতে ছিল ‘বাজেট ব্রিফকেস’। গত বছর বাজেট উপস্থাপনের সময়ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের হাতেও দেখা যায় এই ব্রিফকেস।
বাজেট শব্দটির উৎপত্তি
বাজেট শব্দটির উৎপত্তি এই ব্রিফকেসের দিকে নির্দেশ করে। শব্দটি এসেছে পুরনো ফরাসি শব্দ ‘ব্যুজেট (বোগেট)’ থেকে। ব্যুজেটের অর্থ হলো, থলে বা ব্যাগ। অতীতে থলেতে ভরে দেশের আয়-ব্যয়ের হিসাব আইনসভা বা সংসদে আনা হতো বলে একে ‘বাজেট’ নামে অভিহিত করা হয়।
তবে অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির বর্ণনা একটু অন্য রকম। এতে বলা হয়েছে, ষোড়শ শতাব্দীতে ‘একজনের বাজেট খোলার’ কথাটি ব্যবহৃত হয় এমন অর্থে—কেউ এমন কিছু প্রকাশ করছে, যা গোপন, সম্ভবত কিছুটা সন্দেহজনকও। অনেকটা থলে থেকে কৌশল বের করার মতো।
বাজেট পেশে যে কারণে ব্যবহার করা হয় ব্রিফকেস
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা আকবর আলি খানের বই ‘বাংলাদেশে বাজেট: অর্থনীতি ও রাজনীতি’তে ব্রিফকেসের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। বইটি থেকে জানা যায়, শিল্প-বিপ্লবের পর ইংল্যান্ডের অর্থনীতি অনেক বড় হয়ে যায়। বাজেটবিষয়ক প্রস্তাবগুলো শুধু একটা মানিব্যাগে সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছিল না, সে জন্য মানিব্যাগের জায়গায় আসে ব্রিফকেস।
বইটিতে ব্রিফকেস ব্যবহারের আরেকটি কারণ উল্লেখ করা হয়। সেটি হলো, বাজেটে কোন কর বাড়বে বা কমবে, তার গোপনীয়তা বজায় রাখা অপরিহার্য। তাই সংগত কারণেই সংসদে বাজেট পেশের আগে প্রস্তাবগুলো গোপন রাখতে এই ব্রিফকেস ব্যবহার করা হয়। যে অর্থমন্ত্রী বাজেটের গোপনীয়তা বজায় রাখতে পারেন না, তার পক্ষে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।
বাজেট পেশে যখন থেকে শুরু হয় ব্রিফকেস ব্যবহার
জানা যায়, বাজেট ব্রিফকেসের এই রীতি শুরু হয় ১৮ শতক থেকে। প্রথম শুরু হয় যুক্তরাজ্যে। ব্রিফকেস খুলে এই বাজেট পেশ করা হতো। ১৮৬০ সালে ব্রিটেনের বাজেটপ্রধান উইলিয়াম ই গ্ল্যাডস্টোন লাল একটি ব্রিফকেসে করে বাজেটসংক্রান্ত নথি নিয়ে আসেন। সেই ব্রিফকেসের ওপর সোনা দিয়ে রানির মুখের আদলের ছাপ দেওয়া ছিল। ওই একই ব্যাগ বহু সরকারের আমলেই ব্যবহার করা হয়।
প্রথা অনুযায়ী ‘লাল ব্রিফকেস’ হাতে বাজেট পেশ করতে সংসদে ঢোকেন অর্থ বিভাগের প্রধান। তবে এই ব্রিফকেসের রং সবসময় লাল ছিল না, অনেক সময়ই তা পরিবর্তন হয়েছে। তবে রং যা-ই হোক না কেন, এই ব্রিফকেসকে বাজেটের প্রতীক ধরা হয়।
তবে ২০২১ সালে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ব্রিফকেসের প্রথা ভেঙে লাল মোড়কে মোড়ানো ট্যাবলেট নিয়ে সংসদে প্রবেশ করেন। কাগজপত্র ছাড়া ট্যাবলেট থেকে বাজেট বক্তৃতা পাঠ করেন তিনি।
এমএইচটি