নিজস্ব প্রতিবেদক
০১ জুন ২০২৩, ১০:০৩ এএম
মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দাভাব। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশও। খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে খাদ্যবহির্ভূত পণ্য যেমন: পোশাক, বাড়ি-গাড়ি, সেবা ইত্যাদির দামও বেড়েছে কয়েক গুণ। বিপরীতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে কমেছে মানুষের আয়। এই অবস্থায় জনসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বাড়ানো হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন অর্থবছরে ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বাড়তে পারে। চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বার্ষিক আয়ের প্রথম ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত কর দিতে হয় না। যা আসন্ন বাজেটে বাড়িয়ে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত করা হতে পারে।
কিছুদিন আগেও একই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। গণমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, ‘মূল্যস্ফীতির কারণে একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে। এটার ক্ষতিপূরণের জন্য হলেও ৩ লাখ টাকার পরিমাণকে যদি বাড়িয়ে দেওয়া হয়, মানুষ একটা স্পেস পাবে। তার আয়ে একটু সাশ্রয় হবে। আমি যতদূর জানি, এ বিষয়ে সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে।’
যদিও সে সময় করমুক্ত আয় কি পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি। তবে এটিকে ‘যুক্তিসঙ্গত’ পর্যায়ে নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট উত্থাপিত হতে যাচ্ছে আজ। এবারের বাজেটের মূল শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে।’ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেল ৩টায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এটি উপস্থাপন করবেন। এটি তার পঞ্চম বাজেট ঘোষণা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি ধরে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এই ব্যয় মেটাতে মোট কর আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। যা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ৬৭ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা বেশি।
অন্যদিকে, আগামী অর্থবছরের জন্য (২০২৩-২৪) প্রস্তাবিত বাজেটে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সরকারের ব্যয় চালাতে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর বাইরেও এনবিআর বহির্ভূত কর আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া সরকারের আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি সরকারের পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে কর রাজস্ব আদায়ের অঙ্ক চলতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া নতুন অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশের ঘরে রাখা হয়েছে। টাকার অঙ্কে ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ (অনুদানসহ) ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে ঘাটতি মেটাতে বিদেশি ঋণ বাবদ পাওয়া যাবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। পাশাপাশি সরকার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন খাত থেকে ঋণ নেবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে নেবে ১ লাখ ২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে নেবে ৫ হাজার কোটি টাকা।
/আইএইচ