মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
৩১ মে ২০২৩, ১১:২৯ এএম
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আর মাত্র একদিন বাকি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কেমন হবে বাজেট, তা নিয়ে প্রতিবারই ভাবনায় থাকেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। বাজেট নিয়ে আলোচনার অন্ত থাকে না। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও বাজেট নিয়ে নিজেদের মত তুলে ধরছেন মানুষ। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট যেন সময়োপযোগী ও ভোক্তাবান্ধব হয় সেই দাবি জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ও নাগরিক সমাজের নেতারা।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়নের দাবি জানান তারা। এছাড়াও সর্বজনীন রেশনিং পদ্ধতি, বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্য যাতে না বৃদ্ধি পায় সেই বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বাজেট ভাবনা নিয়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন অরাজনৈতিক নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। তারা বলছেন, সাধারণ মানুষ চাল, তেল, ডালসহ নিত্যপণ্য এবং মাছ ও মাংস তাদের সাধ্যর মধ্যে দেখতে চায়।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, জিনিসপত্রের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এবারের বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্যের ওপর যেন ভ্যাট বা অন্য কোনো করারোপ না করা হয় সে বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। যদি করা হয় আমরা তা প্রত্যাহার করার আহ্বান করছি। বাজেটের এক নম্বর অগ্রাধিকার হওয়া উচিত পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ।
জ্বালানি খাতের কথা উল্লেখ করে গোলাম রহমান বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে অব্যবস্থাপনা, অপব্যয়, অপচয় এসব দূর করতে হবে। সে অনুযায়ী বাজেট করতে হবে। যেসব কারণে জ্বালানি খাত দেওলিয়া হচ্ছে, সেসব কারণ থেকে সরকার যেন সরে আসে। আমরা ভর্তুকির ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দিতে বলি। আরেকটা বিষয় হলো কালা টাকা সাদা করা। আমরা এটার ঘোরবিরোধী। যাদের কালো টাকা আছে তারা অপরাধী। তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সাধারণ নাগরিকদের প্রত্যাশা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ। সংগঠনটির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি যা কোনোভাবেই আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। জীবন জীবিকা চালাতে মানুষ এখন হিমশিম খাচ্ছে। সবার আগে মানুষ মনে করে তার জীবন জীবিকা প্রধান। শিক্ষা, চিকিৎসা এবং জীবন চালানোই এখন সাধারণ নাগরিকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাই এই বাজেটে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে নিত্যপণ্যের দাম নাগালের মধ্যে নামিয়ে আনা।
সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্যের দাম সামর্থের মধ্যে দেখতে চায় উল্লেখ করে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাজেটে এবার সাধারণ মানুষের দৃষ্টি থাকবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্যের ওপর। পাশাপাশি শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতেও সাধারণ নাগরিকরা সাশ্রয়ী এবং সামর্থের মধ্যে ব্যয় নির্বাহ করতে চায়। যাতায়াত খরচ এবং জ্বালানি খাতের মূল্য যাতে না বৃদ্ধি পায় সেদিকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি থাকবে।’
বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে যে বিশাল পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে সেটিকে কমিয়ে আনতে হবে। সাধারণ নাগরিকদের প্রত্যাশা থাকবে করমুক্ত আয়ের সর্বনিম্ন সীমা পাঁচ লক্ষ টাকা যাতে থাকে। সর্বজনীন রেশনিং পদ্ধতি এই বাজেটে চালু করা যায় কি না এবং এর মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে আমরা মনে করি।’
সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষার্থে বাজেটের কাঠামো বদলানোর আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংগঠনটির সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা এই গতানুগতিক বাজেটের পরিবর্তন চাই। বাজেট সময়পোযোগী হওয়া দরকার। যেসব খাত আছে, দু-একটা খাত হয়তো বাদ দেওয়া হয় তাছাড়া এই গতানুগতিক বাজেটের মধ্য দিয়ে সাধারণত যা করা হয় স্বার্থন্বেষীদের স্বার্থই এবং সমাজে উচ্চবিত্তদের স্বার্থই সংরক্ষিত হয়।
বদিউল আলম বলেন, ‘দরিদ্র মানুষের যে হিস্যা এই বাজেটে তারা যেন সেটা পায়। সমাজে পিছিয়ে পড়া বঞ্চিত, নারী বা অন্যান্য যারা আছে তাদের বঞ্চনার অবসান হোক। এটা গতানুগতিক বাজেটের মাধ্যমে হবে না। বাজেটের কাঠামো বদলাতে হবে। ভিক্ষার মাধ্যমে নয়, সমাজের দরিদ্র মানুষ যেন নিজ পায়ে নিজে দাঁড়াতে পারে, নিজের ভাগ্য নিজে বদলাতে পারে তেমন বাজেট করতে হবে।’
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ভর্তুকির কথা উল্লেখ করে সুজন সম্পাদক বলেন, ‘এখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে এটা তো তেলের ওপর তেল দেওয়া। যে ভর্তুকি, স্বার্থান্বেষীদের জন্য তা বাদ দিয়ে সাধারণ মানুষের কল্যাণে যে ভর্তুকি সেটা দিতে হবে। আর কয়েক বছর ধরেই বাজেটে কালো টাকা সাদা করার একটা প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করছি সেটা বন্ধ করতে হবে। এটা কাদের স্বার্থে করা হচ্ছে? তারা তো কঠিন অপরাধ করছে। অপরাধীদের শাস্তি না দিয়ে কেন তাদেরকে এই সুযোগ দেওয়া হবে। তাদের আইনের আওতায় আনা হোক আমরা সেটা চাই।’
টিএই/এমআর