images

অর্থনীতি

আগাম কর প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা 

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:৩৯ এএম

শিল্পোৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে খরচ কমাতে আগাম কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন তারা। একই সঙ্গে করপোরেট কর কমানো এবং এর শর্ত শিথিলের দাবিও জানানো হয়েছে।
 
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট বিষয়ে এনবিআরের পরামর্শক কমিটির এক সভায় এসব প্রস্তাব দেন এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এফবিসিসিআই এই সভার আয়োজন করে।

এফবিসিসিআই সভাপতি বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে বলেন, পণ্য উৎপাদনের জন্য আমদানি করা উপকরণের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ আগাম কর কাটা হয়। ফলে উৎপাদনে খরচ বেড়ে যায়। তাই এই কর ধাপে ধাপে প্রত্যাহার করা উচিত। একই সঙ্গে আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আদায় করা হয়। এটিও শিল্প পরিচালনার ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই এ আয়করও ধাপে ধাপে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা দরকার। ২০১০ সাল পর্যন্ত এ করহার ছিল ৩ শতাংশ।

এফবিসিসিআইর বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়, চলতি অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর কমানো হলেও এ সুবিধার জন্য কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি একক লেনদেন ৫ লাখ টাকার বেশি এবং মাসে মোট ৩৬ লাখ টাকা বেশি সব ধরনের ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। এ শর্ত পূরণ করতে না পারলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আড়াই শতাংশ বেশি করপোরেট কর দিতে হয়। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই এ শর্ত পূরণ সম্ভব নয়। তাই ব্যাংকিং লেনদেনের শর্তে শিথিলতা চাওয়া হয়েছে।
 
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি সামীর সাত্তার বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় এখনও বাংলাদেশে করপোরেট করহার বেশি। এ কর আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেন তিনি। 
  
বর্তমানে নিত্যপণ্যসামগ্রী যেমন, চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্যতেল, চিনিসহ সব ধরনের ফল সরবরাহ পর্যায়ে ২ শতাংশ হারে উৎসে কর রয়েছে। এ জন্য এসব পণ্যে দাম অনেকাংশে বেড়ে যায়। তাই এসব পণ্যকে উৎসে করের আওতামুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়।
 
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে দৃঢ় করতে ব্যবসায়িক খরচ কমিয়ে এনে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে শিপিং খরচসহ সব ধরনের পরিবহন খরচ হ্রাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন।
 
সভায় বাজেট প্রণয়নে বিনিয়োগ, দেশীয় শিল্প ও সেবা এবং সিএমএসএমই খাতে শুল্ককরের যৌক্তিকীকরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। রাজস্ব আহরণ এবং রাজস্ব নীতি কার্যক্রম পৃথক করে এনিবআরের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন বিভাগ গঠন, মুদ্রা পাচারে সহায়ক ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা পরিপন্থী বিদ্যমান ট্যারিফ মূল্য ও মিনিমাম ভ্যালু সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করতে হবে।
 
এছাড়া আমদানি শুল্কের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি, তালিকাভুক্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য এবং দেশে উৎপাদিত হয় না– এমন কাঁচামালের শুল্ক হার ১ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা; আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখতে তালিকাভুক্ত পণ্য বা সেবার ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা; জ্বালানি সাশ্রয় ও পরিবেশবান্ধব গাড়ির শুল্ক হার হ্রাস করার আহ্বানও জানানো হয়। মূসকের ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যন্ত ভ্যাট অফিসের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করে সক্ষম ভ্যাট প্রদানকারীদের ভ্যাট নিবন্ধন, রিটার্ন দাখিল, রিফান্ড, অডিটসহ সব ধরেনর কার্যক্রমে অটোমেশন নিশ্চিতের প্রস্তাব দেওয়া হয়। 

আয়কর বিষয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়, জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে ব্যক্তি করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা এবং নারী ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করা দরকার। 

এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে আগামী বাজেট প্রস্তাবনা সংক্রান্ত একটি বই অর্থমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ফ্ল্যাট, প্লট, বাণিজ্যিক ভবন ও বিপণিবিতানে বিনিয়োগের জন্য বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা বহাল রাখা প্রয়োজন। আগামী ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত এ সুবিধা রাখা হলে দেশে এ জাতীয় সম্পদ ও প্রবৃদ্ধি বাড়বে। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুবিধা বহাল আছে। 

টিএই/এইউ