images

অর্থনীতি

কম দামে পণ্য পেতে টিসিবির কার্ড খুঁজছে মানুষ

ঢাকা মেইল ডেস্ক

২০ মার্চ ২০২৩, ০২:২৯ পিএম

সকালের কর্মব্যস্ততা শুরু হতে না হতেই রাস্তার ধারে ফুটপাতে মানুষের লম্বা লাইন। পরে যারা আসছেন, তারাও ধীরে-সুস্থে লাইনের পিছনে গিয়ে বসছেন। কিসের লাইন জিজ্ঞেস করলে জানান, তারা টিসিবির ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছেন।

এভাবে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর পাশেই এসে দাঁড়ায় একটি ট্রাক। বিক্রির প্রস্তুতি শুরু করতে না করতেই শুরু হয়ে যায় ভিড়। ট্রাক দেখে আরও অনেকে আসতে শুরু করেন। এরমধ্যে কয়েকজন লাইনে দাঁড়ানো কারও কারও মাধ্যমে মাধ্যমে পণ্য কেনার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে শুরু হয় হইচই-চেঁচামেচি। এমনকি ধাক্কাধাক্কিও।

Specialসোমবার (১৩ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার এলাকার কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

টিসিবির লাইনে দাঁড়ানো হাবিব উল্লাহ (৪৬) নামে এক ব্যক্তি বলেন, বাজারে দ্রব্যমূল্য অনেক বেশি। এর প্রায় অর্ধেক মূল্যে পাওয়া যায় টিসিবিতে। তাই এখান থেকে পণ্য কিনতে এসেছি। কিন্তু এখানে কার্ড ছাড়া কিছু কেনা যাচ্ছে না। পরিচয় আছে এমন কারও হাত-পায়ে ধরে কেনার চেষ্টা করছি। সে জন্যই অন্যরা এত চেঁচামেচি ও ধাক্কাধাক্কি শুরু করেছেন।

আবুল বাশার নামে একজন বলেন, কার্ড থাকলে তো এতজনের হাত-পায়ে ধরতে হতো না। আমি এখানে ভাড়া থাকি। কারও সাথে তেমন চেনাজানা নেই। তাই কার্ড করতে পারিনি। কার্ডের জন্য কাউন্সিলরদের কাছে অনেক ধর্না দিয়েছি। পরিচয় না থাকায় কেউ কার্ড দেয়নি।

কার্ড প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সংরক্ষিত ওয়ার্ড-৪ এর কাউন্সিলর তছলিমা বেগম নূরজাহান বলেন, কী আর বলব! প্রায় প্রতিদিনই কার্ড করার জন্য লোকজন আসেন। অনেকে ফোনেও যোগাযোগ করেন। কার্ডগুলোতো টিসিবির। তাদের বরাদ্দ দেওয়া কার্ডগুলো আমরা সমন্বয় করে বিতরণ করি। আর কার্ডের কোনো বরাদ্দ আসলে তো তাদের জানাই। তবে কার্ডের জন্য মানুষের ঘোরাফেরার বিষয়টি মেয়রকে বলেছি।

এ বিষয়ে চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, টিসিবির কার্ড নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ৩ লাখ ৮৩ জন এ কার্ড পেলেও চট্টগ্রামে অনেক মানুষের বসবাস। এরমধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তবে পরিচিত হওয়ায় কার্ড পাওয়ার অভিযোগ আমরাও শুনি। আসলে নগরবাসীর পরিচিতি হলো এনআইডি কার্ড ও জাতীয়তা সনদে। এগুলোর জন্য আবেদন করতে হয়। যারা করেছেন তারা পেয়েছেন। অনেকে ওই সময় না করে পরে করার কথা ভেবেছিলেন হয়তো, তারাই এখন কষ্টে পড়েছেন।

এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, প্রায় সব পণ্যের দাম এখন অনেক বাড়তি। মানুষ আয়ের সাথে ব্যয়ের কোনো সামঞ্জস্য পাচ্ছে না। ফলে সাধারণ মানুষের এখন নিত্যপণ্য কিনতে কষ্ট হচ্ছে। রোজায় এ কষ্ট আরও বাড়তে পারে। তাই টিসিবি যদি সাময়িক সময়ের জন্য হলেও কার্ড না পাওয়া ব্যক্তিদের জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে নিম্ন আয়ের মানুষ উপকৃত হবে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, পবিত্র রমজান উপলক্ষে দুই ধাপে রোজার পণ্য বিক্রি হবে। চট্টগ্রামে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭২টি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের পরিবারের মাঝে প্রথম ধাপে চার পণ্য ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। নতুন করে কার্ড দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত তো আমরা নিতে পারি না। মন্ত্রণালয় থেকে কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আমরা নির্দেশনা অনুযায়ী সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে বিতরণ করব। তবে আমার জানা মতে, এখন আর কার্ড বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।

TCBজানা যায়, পবিত্র রমজান উপলক্ষে গত ৯ মার্চ থেকে চট্টগ্রামে ভর্তুকি মূল্যে চিনি, ডাল, সয়াবিন তেল ও ছোলা বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। সংস্থাটির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, একজন কার্ডধারী ৬০ টাকা দরে এক কেজি চিনি, ৭০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি মসুর ডাল, ১১০ টাকা দরে সর্বোচ্চ ২ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ও ৫০ টাকা দরে এক কেজি ছোলা কিনতে পারছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকাসহ ১৫টি উপজেলার ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় পর্যায় পণ্যগুলো বিক্রয়ে নিযুক্ত রয়েছেন ৮৪ জন ডিলার। ঈদ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ বিক্রয় কার্যক্রম চলবে শুক্রবার ও সরকারি বন্ধের দিন ছাড়া।

পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগরীর দোকানসমূহে চিনি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১২-১২০ টাকায়। মসুর ডাল প্রতি কেজি বিক্রয় হচ্ছে ১৩০ টাকায়, বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রয় হচ্ছে ১৮৫ টাকায়, ছোলা প্রতি কেজি বিক্রয় হচ্ছে ১০০ টাকায়।

নগরীর আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়কের পাশের চৌমুহনী এলাকায় লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে আসা লাভলু বড়ুয়া নামের এক ব্যক্তি বলেন, টিসিবি কার্ড আছে বলে বাজারের তুলনায় কম দরে অনেক কিছু কিনতে পারছি। বাজারে তো যাওয়াই যায় না। প্রতিটি জিনিসের যে দাম! টাকা শেষ হয়ে যায় কিন্তু বাজারের ব্যাগের তলাও ভরে না।

তিনি বলেন, এ সময়টা আমাদের দুর্দিন। আর এ দুর্দিনে টিসিবির পণ্য পাওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ। কিন্তু এ পণ্যগুলো নিয়ে যেন কেউ কারচুপি করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক হলে আমাদের কষ্টটা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

প্রতিনিধি/জেএম