কাজী রফিক
২০ মার্চ ২০২৩, ০১:৩৮ পিএম
পিৎজা, বার্গার বা শর্মার মতো বিলাসী খাবারের তালিকায় স্থান পেতে চলেছে মাংস। নিম্নআয়ের মানুষ যেভাবে ফাস্টফুড থেকে দূরে থাকেন, একইভাবে এখন মধ্যবিত্তরা দূরত্ব বজায় রাখছেন মাংসের বাজার থেকে৷
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং বিভিন্ন এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
ঢাকা শহরে এক কোটির বেশি মানুষের বাস। ঢাকা ওয়াসা ও ওয়াটার এইড বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর এই জনসংখ্যার ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ নিম্ন মধ্যবিত্ত। স্বাভাবিকভাবে তাদের আয় তুলনামূলকভাবে কম। বাজার দরের বাড়তি চাপ ভোগান্তিতে ফেলেছে তাদের।
বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৬০ টাকা। কক মুরগির কেজি ৩৫০ টাকা। এমন অবস্থায় বাধ্য হয়ে ভিন্ন পথ ধরতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সন্তানের মুখে মাংস তুলে দেয়ার চাপ এবং আয়-ব্যয়ের সমতা আনার চেষ্টায় জর্জরিত নিম্ন মধ্যবিত্তরা।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, তার আয়ের উপর নির্ভর চার সদস্যের পরিবার। সন্তানরা মাংস খেতে চায়। কিন্তু সেই ইচ্ছে পূরণে ব্যর্থ তিনি।
বাস চালানোর লাইসেন্স থাকার পরও রিকশা চালান মো. রাজু। রাজধানীর গাবতলী এলাকার বাসিন্দা রাজু ঢাকা মেইলকে বলেন, বেড়িবাঁধে বাস চালাইতাম। এখন আর ওই ইনকামে হয় না। তাই রিকশা চালাই। তাও এক কেজি গরুর মাংস কিনতে পারি না বহুত দিন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি গরুর মাংস এখন ৭৫০ টাকা। খাসির মাংসের কেজি ১১শ টাকা। যা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন উপার্জনক্ষম মানুষের দুই দিনের আয়ের সমান।
অন্যের বাসায় কাজ করে দুই সন্তানের ভরণপোষণ আর পড়াশোনা চালান সোনিয়া বেগম। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বেতনের টাইমে একবার মাংস কিনি। তাও মুরগির মাংস। ওইটাই যতদিন পারি চালাই। মাসের মাঝখানেও পোলাপান মাংস খাইতে চাই। কি করুম! পারি না। তাই মুরগির চামড়া, গিলা-কলিজা, পা এসব কিনা খাওয়াই।
সোনিয়ার মতো অনেকেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টায় রয়েছেন। তার প্রমাণ মিলেছে রাজধানীর বাজারগুলোতে। মুরগি ব্যবসায়ী কালাচান ঢাকা মেইলকে বলেন, মুরগির মাংসের চাহিদা কমলেও মুরগির চামড়া, গিলা-কলিজা, পায়ের চাহিদা বেড়েছে।
এরমধ্যে গিলা-কলিজা ১৩০ টাকা কেজি, পা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ধনাঢ্য অনেকেই হাড়বিহীন মাংস পছন্দ করেন। তারা শুধু মাংস নিয়ে যান, হাড় ফেলে যান। সেই মাংস ছাড়া মুরগির হাড় বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে৷
কালাচানের ভাষ্য, দরিদ্র মানুষগুলো এই হাড় নিয়েই রান্না করে খায়। মাংসের পরিবর্তে পরিবারের সদস্যের পাতে তুলে দিচ্ছেন হাড়।
কারই/জেএম