images

অর্থনীতি

১০ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৮৭ হাজার কোটি টাকা

এইচ রহমান

২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:২০ এএম

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বড় রকম প্রভাব ফেলেছে দেশের অর্থনীতিতে। ক্ষমতার অপব্যবহারের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার অভাবে ধুঁকছে ব্যাংক খাত। মোট খেলাপির ৬৫ শতাংশ বা ৮৭ হাজার কোটি টাকা রয়েছে ১০টি শীর্ষ ব্যাংকের। আর ৫১টি ব্যাংকে ৪৭ হাজার কোটি টাকা বা ৩৫ শতাংশ খেলাপি রয়েছে।

রোববার (২৩ জানুয়ারি) প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সদ্য বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর এসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হলেও সেখানে ব্যাংকের নাম প্রকাশ করা হয়নি। 

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংক। এর পরেই রয়েছে শীর্ষ আরও ১০টি ব্যাংক। খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকের বিপুল অর্থ আটকে রয়েছে প্রভিশন খাতে। ফলে মূলধন ঘাটতিও রয়েছে।

আরও পড়ুন: ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৯ হাজার ৩২৬ কোটি

প্রতিবেদনে বলা হয়, খেলাপি ঋণ ও সম্পদের দিকেও এগিয়ে শীর্ষ ১০ ব্যাংক। অর্থাৎ ব্যাংক খাতে ১০ ব্যাংকের মোট সম্পদ রয়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। বাকি ৫১ ব্যাংকের সম্পদ রয়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ সম্পদ। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে নয়টি ব্যাংকের। ১৫ শতাংশের বেশি থেকে ২০ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ রয়েছে তিনটি ব্যাংকের। ১০ শতাংশের বেশি থেকে ১৫ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ রয়েছে চারটি ব্যাংকের। পাঁচ শতাংশের বেশি থেকে ১০ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ রয়েছে ১১টি ব্যাংকের। তিন শতাংশের বেশি থেকে পাঁচ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ আছে ২২টি ব্যাংকের। দুই শতাংশের বেশি থেকে তিন শতাংশের কম খেলাপি রয়েছে পাঁচটি ব্যাংকের। দুই শতাংশের কম খেলাপি ঋণ আছে ছয়টি ব্যাংকের।

taka

প্রতিবেদনে বলা হয়, তুলনামূলকভাবে কম খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা শক্তিশালী করতে পারে। কিন্তু ব্যাংক খাতে ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। এতে আর্থিক খাতের সম্পদের মান খারাপ হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে ঋণ নবায়নের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে সার্বিকভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ব্যাংক খাতে সম্পদ ও খেলাপি ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। এতে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়েছে। ঋণের প্রবাহ কয়েকটি ব্যাংকে বেশি, যে কারণে এসব ব্যাংকের কারণে ঝুঁকির মাত্রাও বেশি।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিকভাবে মোট ঋণের তিন শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ হলে ওই ব্যাংককে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়।

আরও পড়ুন: ঋণের কিস্তি অর্ধেক দিলেই মিলবে খেলাপি মুক্তি

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুল জায়গায় এসব ঋণ দেওয়া হয়। আবার ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে সঠিক আইন প্রয়োগ না হওয়া। শুধু আইন সংস্কার করলেই হবে না, তা প্রয়োগেও কার্যকর ভূমিকাও রাখতে হবে।’

প্রতিবেদনে তথ্যমতে, গত তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে ঋণ, আমানত ও মূলধন কমেছে। ২০২২ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে মূলধন ছিল ছয় হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তা কম হয়েছে ছয় হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ৬৪৪ কোটি টাকার মূলধন কমেছে। খেলাপি ঋণ বাড়ার ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বাড়ার কারণে ব্যাংক খাতে মূলধন কমেছে। এছাড়া তিন মাসের ব্যবধানে আমানত কমেছে ৭২৬ কোটি টাকা। গত বছরের জুনে ব্যাংক খাতে আমানত ছিল ৪৫ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে তা কমে ৪৪ হাজার ৪০৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। অপরদিকে ঋণ কমেছে ৮৩৭ কোটি টাকা।

এইচআর/জেবি