images

অর্থনীতি

জ্বালানি তেল ৯০ ডলারে নেমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৪ আগস্ট ২০২২, ০৪:৩৩ এএম

বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সুখবর। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ৯০ ডলারের নেমে এসেছে। দুই ধরনের অপরিশোধিত তেলই এখন ১০০ ডলারের কমে বিক্রি হচ্ছে।

দেশে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম কমায় বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ধরনের স্বস্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বৈশ্বিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

ওয়েলপ্রাইস ডটকম জানিয়েছে, বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত সাড়ে ১১ টায় ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত তেল ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল ৯০ ডলার ৫৫ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। আর ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেল বিক্রি হয়েছে ৯৭ ডলার ২৩ সেন্টে; কমেছে ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির পারদ ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠার ধাক্কায় তেলের বাজারে এই পতন হয়েছে বলে জানিয়ে ওয়েলপ্রাইস ডটকম।

জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৯ দশমিক ১ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। যা ১৯৮১ সালের পর সর্বোচ্চ। তবে এতে খুশি নয় বাইডেন প্রশাসন; আরও বড় পতনের আশা করছে।

ব্লুমবার্গের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে হোয়াইট হাউসের বৈশ্বিক জ্বালানি সুরক্ষা বিষয়কসিনিয়র উপদেষ্টা আমোস হোচস্টেইন বলেছেন, ‘তেলের দাম আরও কমা উচিৎ। কেনননা, ওপেক ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের উৎপাদন বাড়িয়েছে।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কায় মাসখানেক ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অল্প অল্প করে কমছিল। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ মূল্যস্ফীতির খবরে দুই ধরনের অপরিশোধিত তেলের দরই ১০০ ডলারের নিচে নেমে আসে।

বেশ কিছুদিন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলে ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছিল। মাস দুয়েক আগে দুই ধরনের তেলের দামই বেড়ে প্রতি ব্যারেল প্রায় ১২৫ ডলারে উঠেছিল।

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।

গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।

কোরবানির ঈদের ছুটির আগে গত ৭ জুলাই বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা করলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তেলের দাম। একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেল ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। এরপর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগে ওঠানামার মধ্যেই তেলের দর ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ছিল।

গত মে মাসের শেষের দিকে তেলের দাম অল্প করে বেড়ে ৩০ মে ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

২০২০ সালের করোনা মহামারির শুরুতে সারা বিশ্বে যখন লকডাউন চলছিল, তখন জ্বালানি তেলের দাম মাইনাস ৩৭ ডলারে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ এক ব্যারেল তেল কিনলে ক্রেতাকে উল্টো ৩৭ ডলার দেয়া হয়েছে। এরপর ওপেক ও রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে তেল সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪৯ ডলার। এর পর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মেতে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার। অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে। সে সময়ই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানো হয়।

এরপর অবশ্য তেলের দাম খানিকটা কমে আসে। যুদ্ধের কারণে ফের তা বাড়তে থাকে। ইউক্রেনে রুশ হামলার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

একেবি