ঢাকা মেইল ডেস্ক
০৩ আগস্ট ২০২২, ০২:২৪ এএম
শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের অর্থনীতির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় কঠোর কৃচ্ছ্বতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
ভারতের বিশিষ্ট গবেষক ও বিশ্লেষক জন রোজারিও ‘বাংলাদেশ কেন শ্রীলঙ্কার মতো সংকটে পড়বে না’ শীর্ষক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষকধর্মী এক নিবন্ধে এসব কথা জানান। সোমবার (১ আগস্ট) ব্যাংকক পোস্টের এশিয়ান ফোকাসে নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশের কৌশল, নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ব্যাপারে আগ্রহী কর্নাটকভিত্তিক এই গবেষকের নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের সামনে এই চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে ইতোমধ্যেই খুব সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’
জন রোজারিও বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা হট টপিকে পরিণত হয়েছে এবং বিশ্লেষকরা অন্যান্য উদীয়মান বাজারের অর্থনীতির দেশগুলোতেও একই ধরনের সংকটের লক্ষণ অনুসন্ধান করছেন।
আরও পড়ুন: উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের রিজার্ভ দৃঢ় অবস্থানে
এই বিশ্লেষক বলেন, ঋণ সংকটের মুখে বা আরও গভীর সংকটে পড়ার আশংকা রয়েছে- এমন দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশকে একই কাতারে সামিল করাটা অন্যায্য হবে।
ব্লুম্বার্গের তথ্যের ভিত্তিতে ভিজুয়্যাল ক্যাপিটালিস্ট ওয়েবসাইটে সম্প্রতি ঋণের ঝুঁকিতে থাকা ২৫টি দেশের যে তালিকা দিয়েছে- তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, রাশিয়া, জাম্বিয়া, লেবানন ও অন্যান্য দেশগুলো বর্তমানে এই কাতারেই রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বেলারুশ দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এবং আরও ১২টি দেশ- আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন, তিউনিসিয়া, ঘানা, মিসর, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, এল সালভাদর, পাকিস্তান ও ইকুয়েডোর ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও উচ্চ ঋণের চাপের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে বাংলাদেশ এই তালিকায় নেই।
বিশ্লেষক বলেন, হ্যাঁ, বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ রয়েছে- তবে কর্তৃপক্ষ খুব সতর্কতার সাথে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নানা ধরনের অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যহ্রাস পেয়েছে, নগদ অর্থের মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রেরণকারীদের নানাভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং বিলাসজাত দ্রব্যের ওপর ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। সরকারের এই অর্থনৈতিক পদক্ষেপগুলো দেশের রিজার্ভ শক্তিশালী করতে সহায়তা করছে- যাতে করে বৈদেশিক চাহিদা সহজেই মেটানো সম্ভব হয়।
তিনি আরও বলেন, এদিকে, বাংলাদেশ সরকারের রফতানি বৃদ্ধি ও আমদানি হ্রাসের নীতিও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অবদান রাখছে।
তিনি এটাও বলেন, অর্থনীতির ওপর কোভিড-১৯ মহামারির বিরূপ প্রভাব- যা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরও ঘনীভূত হয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই যুদ্ধ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশাপাশি গোটা বিশ্বের সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কাকে ‘শেখ হাসিনা মডেল’ অনুসরণের পরামর্শ
তিনি তার নিবন্ধে বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে, দেশটিকে আমদানি-রফতানির মাঝে বিদ্যমান ঘাটতি লাঘবের পাশাপাশি অবশ্যই মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যদিও অন্তত তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানোর মতো ঢাকার যথেষ্ট রিজার্ভ রয়েছে। কিন্তু যদি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও দুর্বল হয়ে পড়ে- তবে রিজার্ভ নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জন রোজারিও তার নিবন্ধতে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যয় সঙ্কোচনের ওপর জোর দিয়েছেন এবং ব্যয় হ্রাস করে সাশ্রয়ী উপায়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে মন্ত্রী ও বিভিন্ন অধিদফতর, পরিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুধু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং অর্থনীতির ওপর থেকে চাপ কমাতে কম-গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো স্থগিত রাখতে বলেছেন।’
কিন্তু তারপরও বাংলাদেশে কিছু বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন যে, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো সংকটজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার জনগণ দেশটির সরকারকে উচ্ছেদের জন্য রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার দেখাচ্ছে যে- শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
তিনি বলেন, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোও বারবার জানাচ্ছে যে, বাংলাদেশের পরিস্থিতির সাথে শ্রীলঙ্কার তুলনা করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।
প্রসঙ্গত, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ব্যাপকভাবে পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল- মহামারিকালে এই শিল্পে ধস নেমেছিল। এর ফলে, দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ খুব দ্রুত কমতে থাকে। পাশাপাশি মহামারির অভিঘাতের পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে দেশটির রিজার্ভ শূন্য হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে এর তাৎপর্য
রিজার্ভ না থাকায় রফতানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং গণ-অসন্তোষ বাড়তে থাকে। এরা আরও বড় ধরনের বিক্ষোভে রূপান্তরিত হয়ে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করে।
পক্ষান্তরে, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত হচ্ছে এর তৈরি পোশাক শিল্প ও বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। -সূত্র: বাসস
জেবি