নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:১৩ পিএম
ঢাকার সাভারের আমিনবাজারে নির্মাণাধীন নর্থ ঢাকা ৪২.৫ মেগাওয়াট বর্জ্যভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে একটি ভুল, ঝুঁকিপূর্ণ ও জনস্বার্থবিরোধী প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করে তা অবিলম্বে বাতিলের গণরায় দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) আমিনবাজারের কোন্ডা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত এক গণশুনানি থেকে সর্বসম্মতিক্রমে এই রায় ঘোষণা করা হয়। গণশুনানিতে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকল্পটির সম্ভাব্য ভয়াবহ প্রভাব তুলে ধরা হয়।
গণশুনানিতে স্থানীয় বাসিন্দা, নারী, যুবসমাজ, বর্জ্য সংগ্রাহক, ভূমি মালিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয় যে, এই প্রকল্প ঢাকার মানুষের জীবনের ওপর একটি পরিকল্পিত স্বাস্থ্যঝুঁকি চাপিয়ে দেবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার হরণ করবে।
ব্যয়বহুল ও অদক্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদন:
গণশুনানিতে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন)-এর ক্যাম্পেইন অফিসার মোহাম্মদ নোমান। তিনি জানান, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম প্রায় ২৫ দশমিক ৫৬ টাকা, যেখানে বর্তমানে দেশের গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ প্রায় ১২ টাকা। অর্থাৎ সরকারকে দ্বিগুণ দামে বিদ্যুৎ কিনতে হবে, যার চাপ শেষ পর্যন্ত জনগণের কর ও বিদ্যুৎ বিলের ওপর পড়বে।
নোমান বলেন, ‘এটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানির নামে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও নোংরা বিদ্যুৎ।’
গণশুনানির সাত দফা চূড়ান্ত দাবি:
গণশুনানি থেকে সর্বসম্মতিক্রমে সাতটি দাবি উত্থাপন করা হয়। এগুলো হলো—
১. ঢাকা নর্থ ৪২.৫ মেগাওয়াট বর্জ্যভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
২. প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও বিলম্বের কারণে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নির্মাণ পরিকল্পনা স্থগিত ও বাতিল করতে হবে।
৩. প্রকল্পের ‘পাওয়ার পারচেস এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) বাতিল করতে হবে।
৪. এআইআইবি ও এনডিনির সব অর্থায়ন প্রত্যাহার করতে হবে।
৫. ঢাকার জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক ও টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাস্টার প্লান করতে হবে।
৬. পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে জনগণের মতামত ও সম্মতি বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৭. ভবিষ্যতে সব বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো প্রকল্পে টেন্ডার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
গণশুনানির রায়:
গণশুনানি কার্যক্রম সঞ্চালনা করেন আলামিন প্রান্ত। বিচারকার্য পরিচালনা করেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, প্রভাষক ও গবেষক কে. এম. আসিফ ইকবাল আকাশ, শিক্ষাবিদ মো. শাহদাত হোসেনসহ বিশিষ্টজনেরা।
স্থানীয়দের সর্বসম্মতির ভিত্তিতে গণশুনানির রায়ে বলা হয়— ‘উন্নয়নের নামে স্থানীয়রা বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র চায় না; তারা চায় সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ, পরিষ্কার বাতাস এবং ন্যায্য ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ।’ এই গণরায়ের মাধ্যমে নর্থ ঢাকা (আমিনবাজার) ৪২.৫ মেগাওয়াট বর্জ্যভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবিলম্বে বাতিলের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
এমআর/ক.ম