images

অর্থনীতি

‘মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ স্থবিরতা ও বৈষম্যের চাপে ভবিষ্যৎ সরকার’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪২ পিএম

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগের স্থবিরতা, কর্মসংস্থানের ঘাটতি ও ক্রমবর্ধমান বৈষম্য—এই চার সংকট একে অপরকে শক্তিশালী করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি গভীর দুষ্টচক্রে আটকে দিচ্ছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী নির্বাচিত সরকারের জন্য অর্থনীতি সামাল দেওয়াই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা।

বুধবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে ভয়েস ফর রিফর্ম (বিআরআইএন)-এর যৌথ আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। তারা বলেন, চলমান সংকট কেবল সাময়িক নয়; নীতিগত দুর্বলতা ও কাঠামোগত সমস্যার কারণে অর্থনীতি একটি ফাঁদের মধ্যে পড়ে গেছে। এখান থেকে বের হতে হলে স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ নয়, বরং গভীর ও সমন্বিত সংস্কার জরুরি।

‘অর্থনীতি কি দুষ্টচক্রের ফাঁদে’ শীর্ষক এই লেকচার সিরিজ ও গোলটেবিল আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হুসাইন বলেন, দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমিয়ে দিচ্ছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধরনের ধস নামিয়েছে। ব্যাংক খাতের দুর্বলতা, খেলাপি ঋণ ও বৈদেশিক মুদ্রার চাপ একে অপরকে প্রভাবিত করে অর্থনীতিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। তার মতে, এই পরিস্থিতিতে স্বল্পমেয়াদি সমাধানে জোর দিলে চলবে না; কাঠামোগত সংস্কারই হতে হবে অগ্রাধিকার।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সমাজের সব স্তরে পৌঁছাচ্ছে না। আয় ও সম্পদের বৈষম্য বাড়ছে, যা সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগজনক। তিনি সতর্ক করে বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে তরুণদের হতাশা ভবিষ্যতে অর্থনীতির ওপর বড় চাপ তৈরি করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ মাহমুদ তিতুমীর বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন একটি কাঠামোগত ফাঁদে আটকে আছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলার অভাব, দুর্বল রাজস্ব ব্যবস্থা এবং উৎপাদন খাতে বৈচিত্র্যের ঘাটতি এই দুষ্টচক্রকে আরও গভীর করছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. মঞ্জুর হোসেন বলেন, ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকার সীমিত রাজস্ব আদায়, বাড়তি সামাজিক ব্যয় এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে অর্থনীতি পরিচালনার কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হবে। বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ও স্পষ্ট অগ্রাধিকার নির্ধারণে ব্যর্থ হলে অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা একমত হন যে, বাংলাদেশকে এই দুষ্টচক্র থেকে বের করে আনতে হলে নীতি-স্বচ্ছতা, ব্যাংক খাত সংস্কার, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং কর্মসংস্থানমুখী প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করাই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ। তা না হলে বর্তমান সংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

অনুষ্ঠানটি সমন্বয় করেন ভয়েস ফর রিফর্ম–এর সহ-আহ্বায়ক ফাহিম মাশরুর। আয়োজকদের মতে, এই ধরনের নীতিনির্ধারণমুখী আলোচনা ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবে।

টিএই/ক.ম