images

অর্থনীতি

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:২৫ পিএম

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও বাজেট ব্যয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আজ একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক ও খাতভিত্তিক অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

মূল্যস্ফীতি
১২ মাসের গড় হিসাবে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি গত জুন ২০২৩–এর পর প্রথমবারের মতো নভেম্বর ২০২৫ মাসে ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মার্চ ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে ৯.৩৩ শতাংশে ওঠে। তবে একই ভিত্তিতে জুন ২০২৫ মাসে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নামে এবং নভেম্বর ২০২৫ মাসে তা আরও কমে ৮.২৯ শতাংশে দাঁড়ায়। সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও কৃচ্ছসাধনের ফলে জুন ২০২৬ মাসে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মজুরি প্রবৃদ্ধি
গত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে বড় ব্যবধান থাকায় মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছিল। তবে চলতি অর্থবছরের সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই ব্যবধান উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। সর্বশেষ নভেম্বর ২০২৫ মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৮.২৯ ও ৮.০৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০২২–২৩ অর্থবছরে এই হার ছিল যথাক্রমে ৯.০২ ও ৭.০৪ শতাংশ। ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকৃত আয় যে পরিমাণ কমেছিল, চলতি অর্থবছরে তা থেকে ধীরে ধীরে উত্তরণের আশা করা হচ্ছে।

কৃষি উৎপাদন
কৃষি খাতে যথাযথ প্রণোদনা ও ব্যবস্থাপনার ফলে গত অর্থবছরে বোরো মৌসুমে ভালো ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত কোনো বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটায় আমন ধানেও ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে চলতি অর্থবছরে সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত আমন ধানের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১৬০.৯৫ লাখ মেট্রিক টনে। অবশিষ্ট ফসল কর্তন সম্পন্ন হলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আউশ ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম হলেও ২০২৪–২৫ অর্থবছরের তুলনায় মোট উৎপাদন ৭.২০ শতাংশ বেড়েছে।

বৈঠকে জানানো হয়, দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন চলকের ভারসাম্যহীনতা ইতোমধ্যে অনেকটাই ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় এসেছে।

আর্থিক ও বৈদেশিক খাত
১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত গ্রস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২.৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৪ সালের আগস্টে এই রিজার্ভ ছিল প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার। মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল হওয়া, প্রবাস আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি এবং আর্থিক খাতে সুদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায় আগামীতে রিজার্ভ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।িআরও 

আরও পড়ুন: আপনি দেশের মালিক, চিন্তা-ভাবনা করে ভোট দিন: প্রধান উপদেষ্টা

চলতি হিসাব
২০১৬–১৭ অর্থবছর থেকে ২০২৩–২৪ অর্থবছর পর্যন্ত চলতি হিসাব ধারাবাহিকভাবে ঋণাত্মক ছিল। ২০২১–২২, ২০২২–২৩ ও ২০২৩–২৪ অর্থবছরে এর ঘাটতি ছিল যথাক্রমে ১৮.৭, ১১.৬ ও ৬.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে আর্থিক খাতে সুব্যবস্থাপনা ও অর্থ পাচার রোধের ফলে ২০২৪–২৫ অর্থবছর শেষে ঘাটতি নেমে আসে মাত্র ১৩৯ মিলিয়ন ডলারে। চলতি অর্থবছরের জুলাই–অক্টোবর সময়ে চলতি হিসাবের ঘাটতি ছিল ৭৪৯ মিলিয়ন ডলার।

প্রবাস আয়
চলতি অর্থবছরের জুলাই–নভেম্বর সময়ে ৫ লাখ কর্মীর বৈদেশিক নিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার। একই সময়ে প্রবাস আয় হয়েছে ১৩.০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭.১৪ শতাংশ বেশি।

আমদানি
অর্থনীতিকে আরও উৎপাদনশীল করতে আমদানিতে আরোপিত বিভিন্ন বিধিনিষেধ অপসারণ করা হয়েছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জুলাই–নভেম্বর সময়ে আমদানি প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক ১.২ শতাংশ। চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.১ শতাংশে।

ঋণপত্র
মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের জুলাই–অক্টোবর সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক ৩২.৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ২৭.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শিল্পজাত কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জুলাই–অক্টোবর সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.১ শতাংশ, যা ২০২৫–২৬ অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ৪০.৯৮ শতাংশ। বৈঠকে বলা হয়, আর্থিক অব্যবস্থাপনার ফলে দেশের ভাবমূর্তির যে অবনতি হয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠার প্রমাণ হিসেবে ঋণপত্র খোলা ও ট্রেড ফিন্যান্সিং এখন আগের তুলনায় সহজ হয়েছে।

এআর