জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪০ পিএম
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান বিন হাদী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে উঠে আসা ফয়সাল করিম মাসুদ ও তাঁর স্বার্থ–সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির দাবি, অভিযুক্ত ও সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকার বেশি অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
রোববার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সিআইডি।
সিআইডি জানায়, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে এই অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। পরে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত শুরু করা হয়।
সিআইডির ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে শরীফ ওসমান হাদী মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার পর থেকেই তারা ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে ক্রাইমসিন ইউনিট মোতায়েন, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ, ঘাতকের ব্যবহৃত গুলির খোসা উদ্ধার এবং পরবর্তীতে উদ্ধার করা বিভিন্ন আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মানি লন্ডারিং আইনে পৃথক তদন্ত শুরু করা হয়।
গ্রেপ্তার অভিযান চলাকালে উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবইয়ের তথ্য গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করেছে সিআইডি। অভিযুক্ত ও তাঁর স্বার্থ–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একাধিক চেকবইয়ে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থের উল্লেখ রয়েছে। চূড়ান্ত লেনদেন সম্পন্ন না হওয়া এসব চেকের সমষ্টিগত মূল্য প্রায় ২১৮ কোটি টাকা বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।
সিআইডি আরও জানায়, প্রাথমিক বিশ্লেষণে অভিযুক্ত ও তাঁর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকার বেশি অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব লেনদেন মানি লন্ডারিং, সংঘবদ্ধ অপরাধ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণে মানি লন্ডারিং বিষয়ে পৃথক অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইডি।
এ ছাড়া অভিযুক্ত ও তাঁর স্বার্থ–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে থাকা প্রায় ৬৫ লাখ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে দ্রুত বাজেয়াপ্ত করতে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
পাশাপাশি এসব অর্থের মূল উৎস চিহ্নিত করতে সিআইডির অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহে কোনো সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সক্রিয় ছিল কি না, সে বিষয়েও সিআইডির একাধিক দল কাজ করছে।
অন্য সংস্থার পাশাপাশি মূলহোতাকে গ্রেপ্তার এবং পুরো অপরাধচক্র উন্মোচনে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান চলমান রয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় ওসমান হাদী হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ওরফে রাহুলকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে মামলার আলামত গোপন এবং অভিযুক্তকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে তাঁর পরিবারের সদস্যসহ একাধিক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এমআইকে/এআর