জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৪ পিএম
বিশ্ব ব্যাংকের সালিশি আদালতে এস আলম গ্রুপের করা অভিযোগকে ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ মন্তব্য করে এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, এস আলম গ্রুপ যে অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক তা শক্তভাবে মোকাবিলা করবে এবং প্রয়োজনীয় প্রমাণ উপস্থাপন করা হবে।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ ও পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধারসংক্রান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, এস আলম দাবি করছেন তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক প্রমাণ করবে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন এবং দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, “চোরের মায়ের বড় গলা। আমরা এই মামলাটি লড়ব।”
সম্প্রতি এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও তার পরিবারের পক্ষে আইনজীবীরা ওয়াশিংটনে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের সালিশি আদালত ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটসে (আইসিএসআইডি) আবেদন করেন। লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এ তথ্য জানিয়েছে।
আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, সরকার তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ, সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে ‘ভিত্তিহীন’ তদন্ত চালিয়েছে। পাশাপাশি এস আলম পরিবারের বিরুদ্ধে ‘প্ররোচনামূলক মিডিয়া অভিযান’ চালানো হয়েছে বলেও দাবি করা হয়। এসব কারণে শত কোটি ডলারের ক্ষতির কথা বলা হলেও ক্ষতিপূরণের সুনির্দিষ্ট অঙ্ক উল্লেখ করা হয়নি।
বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় ২০০৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী এই সালিশি মামলা করা হয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলম পরিবার ২০২০ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করার পর ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে এবং বর্তমানে সেখানেই বসবাস করছে।
এস আলম পরিবারের অভিযোগের জবাবে গভর্নর বলেন, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো আইনগত প্রক্রিয়ার অংশ। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
পাচার করা অর্থ ফেরত আনার প্রসঙ্গে গভর্নর জানান, বিদেশ থেকে অর্থ পুনরুদ্ধারে সাধারণত চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে। এর কম সময়ে সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, লন্ডনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মামলায় ইতিবাচক অগ্রগতির সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ ওই মামলায় তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করেননি। সেখানে ইসলামী ব্যাংক ও ইউসিবিএলও মামলার পক্ষভুক্ত। তবে অর্থ কবে দেশে আসবে, তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করে গঠিত নতুন সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য সরকার বাজেট থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে। আগের ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের টাকা ফেরতের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু প্রক্রিয়াগত সময় লাগবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমানতকারীদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা জমা দেওয়া হবে এবং সবাই একসঙ্গে অর্থ পাবেন।
টিএই/ক.ম