জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩২ পিএম
একীভূত হওয়া পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকদের আবারও আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি জানিয়েছেন, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকে রূপান্তরের প্রক্রিয়া এগোচ্ছে এবং আগামী সপ্তাহ থেকেই গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ শুরু হতে পারে। প্রাথমিকভাবে ডিপোজিট গ্যারান্টির আওতায় ২ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতি’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় গভর্নর এসব বলেন।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, একীভূত হওয়া নতুন ব্যাংকগুলো প্রাথমিক মূল্যায়ন অনুযায়ী প্রথম বা দ্বিতীয় বছরের মধ্যেই লাভজনক অবস্থায় যেতে পারে। লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘লভ্যাংশ নয়, বোনাস নয়’ নীতিমালা কঠোরভাবে কার্যকর রয়েছে বলেও জানান তিনি।
গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন ও জবাবদিহিতা জোরদার করতে বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যেসব কর্মকর্তা প্রদত্ত ঋণ দ্রুত খেলাপিতে পরিণত করেছেন, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজার নিয়ে গভর্নর বলেন, বাজার পুরোপুরি অস্থির থাকা অবস্থায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ অনুযায়ী ডলারদর বাজারভিত্তিক করা হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত। তখন মুদ্রার দাম শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো অস্বাভাবিক হারে বাড়ত। “হয়তো ১৯০–২০০ টাকায় পৌঁছাত,” মন্তব্য করেন তিনি।
গভর্নর জানান, দায়িত্ব গ্রহণের সময় দেশের মুদ্রা দ্রুত অবমূল্যায়িত হচ্ছিল, রিজার্ভ কমে যাচ্ছিল, খেলাপি ঋণ ও তারল্য সংকট ছিল গভীর। “বিনিময় হার স্থিতিশীল না হলে মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই অসম্ভব—এ বিশ্বাস থেকেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি,” বলেন গভর্নর। দায়িত্ব গ্রহণের সময় ডলারের বিনিময় হার ছিল প্রায় ১২০ টাকা, যা এখন বাজারভিত্তিক ব্যবস্থায় স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে, পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং নয়টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসান প্রক্রিয়া চলছে। একই সঙ্গে আমানত বীমা আইন, ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ ও ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রমও এগিয়ে চলছে।
দেশের বৈদেশিক খাতের উন্নতির কথা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত, আর্থিক হিসাবে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি এবং সামগ্রিক পরিশোধ ভারসাম্য উদ্বৃত্ত অবস্থানে রয়েছে। এক বছর আগে যেখানে রিজার্ভ নেমে এসেছিল ১৭ বিলিয়ন ডলারে, সেখানে এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলার।
সুদহার প্রসঙ্গে গভর্নর স্পষ্ট করে বলেন, এখনই সুদহার কমানোর সুযোগ নেই। মূল্যস্ফীতি ১২.৫ শতাংশ থেকে নেমে ৮ শতাংশের সামান্য ওপরে এলেও বাস্তব সুদহার ইতিবাচক রাখা জরুরি।
গভর্নর জানান, প্রকৃত খেলাপি ঋণের (এনপিএল) চিত্র দীর্ঘদিন ধরে আড়াল করা হচ্ছিল। স্বচ্ছতা আনার পর দেখা গেছে প্রকৃত খেলাপি ঋণের হার ৩৫ শতাংশেরও বেশি। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমে আসার প্রবণতা স্পষ্ট হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন গভর্নর।
টিএই/ক.ম