images

অর্থনীতি

‘আগামী সপ্তাহ’ আসবে কবে জানতে চান ৫ ব্যাংকের গ্রাহকরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৮ পিএম

টাকা ফেরত পেতে গভর্নরের এক সপ্তাহের প্রতিশ্রুতির অবসান দ্রুত টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকরা। রোববার (৭ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এক মাস দুই মাস করতে করতে আমরা দেড় বছর ধরে অপেক্ষা করে বসে আছি। কিন্তু আমাদের জমানো টাকা ব্যাংক থেকে ফেরত পাচ্ছি না। গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছিলেন নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে টাকা তুলতে পারবেন সাধারণ গ্রাহক। কিন্তু গত সপ্তাহে আমরা ব্যাংকে গিয়ে টাকা পায়নি। ডিসেম্বর মাসেরও এক সপ্তাহ পার হেয় গেল। কিন্ত এখনো টাকা দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো। আর কত সপ্তাহ পর আমরা টাকা ফেরত পাবো তা আমরা জানতে চাই। 

সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়ন ব্যাংকের আমানতকারী আলিফ রেজা বলেন, ‘দ্রুত ব্যাংকের লেনদেন স্বাভাবিক করা হোক। আমরা কোনো টাকা তুলতেও পারছি না। আবার এক একউন্ট থেকে অন্য একাউন্টে স্থানান্তর করতেও পারছি না। ব্যাংক আমাদের কষ্টের টাকা গচ্ছিত থাকলেও সেই টাকা তুলতে পারছি না। ফলে বাবা মায়ের চিকিৎসা, সন্তানের স্কুলের বেতন, ব্যবসায়িক কাজে টাকা তুলতে না পারা ও পারিবারিক প্রয়োজনের টাকা না পেয়ে এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব আমাদের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

এক্সিম ব্যাংকের সাভার শাখার ভুক্তভোগী মেরিনা হক বলেন, ‘গভর্নর আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন আগামী সপ্তাহ থেকে এই পাঁচ ব্যাংকের লেনদেন স্বাভাবিক হবে। কিন্তু সেই সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। আজ সকালেও আমি এক্সিম ব্যাংকের গুলশান শাখায় গিয়ে আমার জমানো টাকা তুলতে পারিনি। শাখা ম্যানেজার বললেন, আমাদের কাছে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই ব্যাংক আমাকে টাকা দিতে পারবে না। তাহলে আমরা আর কত সপ্তাহ অপেক্ষা করব? আমাদের আজকের সংবাদ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হলো আমরা একটা নির্দিষ্ট তারিখ চাই। জানতে চাই ঠিক কবে থেকে আমরা টাকা তুলতে পারব।’

লিখিত বক্তব্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ভুক্তভোগী গ্রাহক মো. পলাশ বলেন, ‘একীভূত হওয়া পাঁচ ইসলামী ব্যাংক হলো- এক্সিম, এসআইবিএল, এফএসআইবি, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক। আমাদের কষ্টার্জিত টাকা এসব ব্যাংকের ভল্টে সুরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও সেই টাকা ফিরে পাওয়ার আশায় আমরা আজ পথে পথে ঘুরছি। গত ২৮ নভেম্বর প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন থেকে আমরা ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে একটি সুনির্দিষ্ট আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই যে, গভর্নর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে আগামী সপ্তাহ থেকে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করার আশ্বাস দিয়েছেন। ফলে আমাদের পূর্বঘোষিত বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি আপাতত এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হলো। আমরা আশা করি, এই সময়ের মধ্যে আমাদের দাবির অনুকূলে আশানুরূপ ফল পাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমাদের মূল উদ্বেগ এখনো রয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়ী হিসাবের নিরাপত্তা দিলেও ২ লাখ টাকার অধিক সম্পূর্ণ আমানতের- যেমন এফডিআর, ডিপিএস ও সঞ্চয়পত্র- সম্পর্কে এখনো কোনো লিখিত বা স্পষ্ট ঘোষণা পাইনি। আমরা এ বিষয়ে পরিষ্কার অবস্থান চাই। তা নাহলে আগামী ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত দাবিগুলো হলো- গেজেটের মাধ্যমে সকল আমানতকারীর সম্পূর্ণ আমানতের শতভাগ নিরাপত্তা ঘোষণা করতে হবে (সঞ্চয়ী, চলতি হিসাব, এফডিআর, ডিপিএস) - সবই মুনাফাসহ ফেরত দিতে হবে। টাকা কখন, কীভাবে এবং কোন ধাপে ফেরত দেওয়া হবে- তার একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ গেজেট আকারে দ্রুত প্রকাশ করতে হবে। আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকের সকল লেনদেন স্বাভাবিক করতে হবে (প্রয়োজনে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট উত্তোলনসীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে)। 

এছাড়া লেনদেন স্বাভাবিক করার স্বার্থে নির্দিষ্ট লিমিট নির্ধারণ করে সব ধরনের অনলাইন লেনদেন চালু করতে হবে। ৬৫ বছর ঊর্ধ্ব বয়স্ক ও ক্যানসার রোগী আমানতকারীদের সম্পূর্ণ টাকা তাৎক্ষণিক ফেরতযোগ্য হিসেবে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং গ্রাহকের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য আগামী ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করতে হবে।

টিএই/এএইচ