images

অর্থনীতি

ঋণ খেলাপি কমাতে অবলোপন নীতিমালায় আরও ছাড়

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০০ পিএম

খেলাপি ঋণ কমাতে এবার ঋণ আংশিক অবলোপনের অনুমতি দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল খেলাপি হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যেই অবলোপন করা যাবে। যেটা আগে ছিল দুই  বছর। তবে তার জন্য ঋণগ্রহীতার ঋণ রাইট-অফ বা অবলোপন করার কমপক্ষে ১০ কার্যদিবস আগে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে নোটিশ দেওয়ার শর্ত পালনীয়। আগের প্রজ্ঞাপনে কোনো ঋণ আংশিক অবলোপনের সুযোগ ছিল না।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই নির্দেশনা জারি করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ‘আগে জারি করা নির্দেশনায় কোনো ঋণ হিসাব আংশিকভাবে অবলোপনের সুযোগ না থাকায় বহু ক্ষতিজনক ঋণ স্থিতিপত্রে বহাল থাকতো। এতে ব্যাংকের ব্যালান্স শিট অপ্রয়োজনীয়ভাবে স্ফীত দেখাতো এবং সম্পদের প্রকৃত মানায়ন কঠিন হয়ে পড়তো। নতুন নীতিমালার ফলে ভবিষ্যতে আদায় অযোগ্য বলে বিবেচিত অংশ ঋণ হিসাব থেকে বাদ দেওয়া সম্ভব হবে।’

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘যেসব ঋণ ‘মন্দ ও ক্ষতিজনক’ হিসেবে শ্রেণিকৃত এবং যেগুলোর আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ, সেসব ঋণের অনাদায়ী অংশ আংশিক অবলোপন করা যাবে। তবে জামানত দ্বারা আবৃত অংশ আদায়যোগ্য মর্মে নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনে পেশাদার প্রতিষ্ঠান দিয়ে জামানতের বাজারমূল্য পুনর্মূল্যায়ন করা যাবে।’

নীতিমালায় বলা হয়, আংশিক অবলোপনের ক্ষেত্রে প্রথমে সুদের অংশ বাদ দিতে হবে। অনারোপিত সুদ আলাদা হিসাবে হিসাবায়ন করতে হবে। এছাড়া গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত ব্যতীত আদায়কৃত অর্থ দিয়ে অবলোপিত অংশের পাওনা আগে সমন্বয় করা হবে। পরবর্তীতে অবশিষ্ট অর্থ থাকলে স্থিতিপত্রে প্রদর্শিত বকেয়া ঋণে সমন্বয়ের সুযোগ থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক আরো জানিয়েছে, অবলোপনের পরও ঋণের আদায় প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং প্রয়োজন হলে পুনঃতফসিল অথবা এক্সিট সুবিধা দেওয়া যাবে গ্রাহককে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, ব্যাসেল নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক আর্থিক রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) অনুসারে আংশিক ঋণ অবলোপন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি পদ্ধতি। প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাসহ উন্নত দেশগুলোতেও একই চর্চা রয়েছে।

নতুন নীতিমালা কার্যকর হওয়ায় ব্যাংকিং খাতে নন-পরফর্মিং লোনের প্রকৃত অবস্থা আরও স্বচ্ছভাবে উপস্থাপিত হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সম্পদের গুণগত মান উন্নয়নের পাশাপাশি নীতি-নির্ধারণেও সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রসঙ্গত, মন্দমানে শ্রেণিভুক্ত হওয়া ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করে অবলোপন করার মাধ্যমে খেলাপি কম দেখাতে পারে। গত বছর শেষে অবলোপন করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এক নির্দেশনায় ঋণ অবলোপনের শর্ত শিথিল করে বলা হয়,  যেসব ঋণ টানা দুই বছর মন্দ ও ক্ষতিজনক মানে শ্রেণি করা রয়েছে, কেবল সেসব ঋণ অবলোপন করা যাবে। গত অক্টোবরের নির্দেশনায় অন্তত দুই বছর খেলাপি থাকার শর্ত শিথিল করা হয়। তবে ৩০ দিন আগে নোটিশ দিতে বলা হয়েছিল। এখন সেই শর্ত আরও শিথিল করা হলো।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রে বহুদিন ধরে ঝুলে থাকা ঋণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১০ কর্মদিবস আগে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতাকে নোটিশ দিয়ে বিষয়টি জানাতে হবে। এতে ঋণ অবলোপনে নোটিশের সময় কমলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ বেড়ে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ৪৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০২৩ সাল শেষে এমন ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এক বছরে বেড়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা বা ৫২ শতাংশ। দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে পুনঃতপশিল করা অনাদায়ী ঋণ রয়েছে তিন লাখ ৪৮ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। নিয়মিত খেলাপি হিসাবে দেখানো হয়েছে তিন লাখ ৪৬ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া অবলোপন করা অনাদায়ী ঋণস্থিতি বেড়ে ২০২৪ সাল শেষে ৬২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকায় ঠেকেছে।

টিএই/ক.ম