জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৯ জুন ২০২২, ০৬:৪৬ পিএম
বারবার প্রকল্প সংশোধনের নামে যে বাড়তি খরচ হয় তাতে এক বছরের অতিরিক্ত খরচ দিয়ে একটি পদ্মা সেতু করা সম্ভব বলে মনে করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১টি প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো সংশোধনের ফলে খরচ বেড়েছে ২৯ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। বাড়তি এই খরচের টাকায় একটি পদ্মা সেতু করা সম্ভব। পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
বুধবার (২৯ জুন) রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে ‘ইমপ্লিমেন্টেশন অব পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্ট ইন বাংলাদেশ ইন শিওরিং গুড ভ্যালু ফর মানি’ শীর্ষক সংলাপে উপস্থাপনায় এই দাবি করেন।
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বারবার প্রকল্প সংশোধন হয়, সময় বাড়ানো হয়। সময় বৃদ্ধি মানেই ব্যয় বৃদ্ধি। আমরা মেগা প্রকল্প ও ছোটখাটো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট উপস্থাপিত হয়েছে, সেখানে দেখেছি এক হাজার ৩৫৬টি প্রকল্প বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স বাদ দিলে এক হাজার ২৫০টি প্রকল্প থাকে। এগুলো বিভিন্ন সামাজিক অবকাঠামো, সড়ক, সেতুসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ। এসব প্রকল্পে লাখ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এগুলো বাস্তবায়িত হবে। আমরা যদি সুশাসনের সঙ্গে সময়মতো এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারি, সাশ্রয়ীভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি- তবে দেশের জন্য মঙ্গল। তাহলে আমরা আরও বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবো। এতে আমাদের যে অর্থ সাশ্রয় হবে তা দিয়ে অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবো।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা যে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারি তা ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন। পদ্মা সেতু আমাদের অর্জনের একটা বড় প্রতীক। এটা প্রত্যাশিত টাইমলাইনে হয়েছে। পদ্মা সেতু থেকে ইতিবাচক আর্থ-সামাজিক ফলাফল আমরা পাবো। প্রলম্বিত ইতিবাচক একটা ছায়া রেখে যাবে এই সেতু। এটার অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আমরা দেখছি মেগা প্রকল্প সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে খবরদারি করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ফলে আমরা একটা ইতিবাচক সুফল পাচ্ছি। এই বিষয়টি অন্যান্য প্রকল্পেও যদি কাজে লাগাতে পারি তাহলে এক হাজার ২৫০টি অবকাঠামো ও বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রকল্প ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবো। এসব প্রকল্প নিয়ে একটা কাঠামো করা গেলে আমরা ভালোভাবে কাজ করতে পারবো। তাহলে আমাদের অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে।
সিপিডির বিশেষ ফেলো বলেন, ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবকাঠামো উন্নয়নে জড়িত। সঠিক মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে এসডিজি অর্জনে অনেকখানি এগিয়ে যাবো। আমরা যে প্রবৃদ্ধি করতে চাচ্ছি, ২০৩৩ সালের মধ্যে যা করতে চাচ্ছি তা অর্জন করতে পারবো। যদি ভালোভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে প্রাইভেট খাত আরও আকৃষ্ট হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ যখন একটা সড়ক হয়, একটা সেতু হয়- তখন তাকে ঘিরে যা বিনিয়োগ হয় তা অবর্ণনীয়। এখান থেকে সরকার কর ও রাজস্ব আদায় করতে পারবে।
প্রকল্পের ধীরগতি প্রসঙ্গে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একটা তুলনামূলক চিত্র যদি দেখি, ২০২১-২২ অর্থবছরে যেসব প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল তার সবই কিন্তু হয়নি। এরকম প্রকল্প কিন্তু ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। তার মানে হলো এগুলো সময়মতো শেষ করতে পারিনি। আমরা জানি সময় বৃদ্ধি মানেই ব্যয় বৃদ্ধি। এটা একটা সাধারণ সমীকরণ।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা ২০২১-২২, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি যদি দেখি তাহলে দেখা যায়, এডিপিতে অনেক প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এর সংখ্যা কিন্তু কম নয়। দেখা যায় নানা প্রকল্প এক থেকে তিনবার পর্যন্ত সংশোধন করা হয়। আমরা এখানে একটা হিসাব করেছি, আমাদের (সিপিডির) যে স্বাধীন উন্নয়ন পর্যালোচনা, সেখানে দেখা গেছে অনেক প্রকল্প অনেকবার সংশোধন করতে হয়। এগুলোতে ব্যয় বেড়েছে মূলত সংশোধনের কারণে। বিভিন্ন প্রকল্পে সিম্বলিক (প্রতীকী) বরাদ্দ দেওয়া হয়। এটা বাদ দেওয়া ভালো।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনা সংলাপে অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটি অন এস্টিমেটের চেয়ারম্যান উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ, সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান প্রমুখ। সিপিডি ও দ্যা এশিয়ান ফাউন্ডেশন সংলাপের আয়োজন করে।
ডব্লিউএইচ/জেবি