images

অর্থনীতি

দুর্বল ব্যাংক একীভূত না হলেও ফেরত মিলবে শতভাগ আমানত

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন

৩১ জুলাই ২০২৫, ১০:২৫ এএম

  • ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫’র সংশোধিত খসড়া অনুমোদন
  • বিশেষ তহবিল গঠন, প্রয়োজনে টাকা ছাপা বা বন্ড ইস্যুর চিন্তা
  • সংকটাপন্ন ১৬ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও আমানত সুরক্ষার আওতায়

দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল এবং একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরা তাদের পুরো অর্থ ফেরত পাবেন—এমন নিশ্চয়তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর সংশোধিত খসড়া অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।

বুধবার (৩০ জুলাই) গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪৪১তম পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা।

বর্তমানে পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, সোশ্যাল ইসলামী ও এক্সিম ব্যাংকের একীভূত করার সরকারি উদ্যোগ রয়েছে। এ ঘোষণার পর থেকেই এসব ব্যাংকের প্রায় ৯২ লাখ গ্রাহকের মধ্যে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে দ্রুত অর্থ তুলে নেওয়ার দিকেও ঝুঁকেছেন।

এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এসব ব্যাংক একীভূত না হলেও গ্রাহকের আমানত শতভাগ ফেরত দেওয়া হবে। একই ধরনের সুরক্ষা মিলবে ১৬টি দুর্বল ও সংকটাপন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের জন্যও।

পর্ষদ সভায় অনুমোদিত নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রয়োজনে এই তহবিল গঠনে টাকা ছাপানো কিংবা বন্ড ইস্যুর মতো ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে। পুরো বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ২ থেকে ৫ বছর সময় লাগতে পারে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ঘোষণার পর গ্রাহকের আস্থাহীনতা ছিল স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগ সময়োপযোগী। তবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমানে দেশে ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা ১৭ কোটি। তাদের অধিকাংশের আমানত ২ লাখ টাকার নিচে। বর্তমানে কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলে ওই পরিমাণ টাকা পর্যন্ত বিমার আওতায় ফেরত দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, সাড়ে ৯ কোটির বেশি গ্রাহকের জন্য এ সীমা যথেষ্ট নয়।

তাই নতুন অধ্যাদেশে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতের নিরাপত্তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অতিরিক্ত টাকার জন্য ট্রেজারি বন্ড দেওয়ার বিষয়েও ভাবা হচ্ছে।

সভায় ডিজিটাল ব্যাংকের বিষয়টিও আলোচিত হয়। আগে নগদ ও কুড়ি নামে দুটি প্রতিষ্ঠানে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও পক্ষপাত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এবার উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নতুন করে দরখাস্ত আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, গ্রাহকের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এ ধরনের উদ্যোগ জরুরি। তবে অর্থনৈতিক ভারসাম্য না রেখে টাকা ছাপানো হলে তা আরও বিপর্যয় আনতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, পর্ষদ সভায় দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের আমানত সুরক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় ছিল। শতভাগ অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

টিএই/এএস