images

অর্থনীতি

রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সে জোয়ার, কমেছে বৈদেশিক লেনদেন ঘাটতি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

১৪ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৯ এএম

দেশের বৈদেশিক লেনদেন ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের চাপ কিছুটা কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি, চলতি হিসাব ও সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যের নেতিবাচক অবস্থান আগের তুলনায় অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার পাশাপাশি আমদানির গতি তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকায় এ ভারসাম্য ফিরে আসছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ বৈদেশিক লেনদেন বা ব্যালান্স অব পেমেন্ট (বিওপি) সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সময়ে দেশে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ৮৭ কোটি ডলার। একই সময়ে আমদানি হয়েছে ৬ হাজার ২৫ কোটি ডলারের পণ্য। এতে ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৩৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।

এই সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬১১ কোটি ডলার। আর সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১৫ কোটি ডলার, যেখানে আগের বছরের মে শেষে ঘাটতি ছিল ৫৮৮ কোটি ডলার।

বৈদেশিক আয় বাড়ার পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে প্রবাসীরা মোট ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ২১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রতি উৎসাহ-প্রদান এই প্রবাহ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

রপ্তানিও বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত থেকে পাওয়া অর্ডার বাড়ায় এবং রপ্তানি অর্থ পুরোপুরি দেশে আসতে শুরু করায় বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ কিছুটা স্থিতিশীল হচ্ছে। আগে যেসব রপ্তানির টাকা আংশিক দেশে আসত, এখন সেগুলোর পুরো টাকাই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আসছে বলে জানিয়েছে একাধিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।

এই সময়ে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআইও কিছুটা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত দেশে মোট ১৫৮ কোটি ডলারের এফডিআই এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ১৩৫ কোটি ডলার। তবে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের চিত্র এখনো নেতিবাচক। বিগত ১১ মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেটুকু বিনিয়োগ এনেছেন, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ তুলে নিয়েছেন। ফলে নিট মাইনাস দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৭ লাখ ডলার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর প্রবাসী আয়ে আস্থা ফিরে এসেছে। সেই সঙ্গে রপ্তানির অর্থ দেশে ফেরত আনার প্রবণতা বেড়েছে। অপরদিকে, আমদানি খরচ তেমন বাড়েনি। সবমিলিয়ে চলতি হিসাব ও সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে যে চাপ ছিল, তা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ কিছুটা হলেও কমবে এবং মূল্যস্ফীতির ওপরও নিয়ন্ত্রণ আসবে বলে মনে করছেন তারা।

টিএই/এএস