মাহাবুল ইসলাম
০২ জুন ২০২৫, ০১:০৬ পিএম
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেশে কোরবানির পশুর বাজার জমে উঠেছে। বাজারের চিরচেনা দৃশ্যের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে নতুন মাত্রা যোগ করেছে অনলাইন পশু হাট। তবে এবছর সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত অনলাইন হাট কার্যত অস্তিত্বহীন, বিপরীতে বেসরকারি খামারি ও প্ল্যাটফর্মগুলোর হাট চলছে সফলভাবেই।
সরকারি অনলাইন হাটের দৈন্যদশা
২০২০ সালের কোভিড-১৯ মহামারির সময় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও এটুআই (a2i)-এর যৌথ উদ্যোগে চালু হয়েছিল ‘ডিজিটাল হাট ডট গভ ডটবিডি’ নামের একটি ওয়েবসাইট। এর মাধ্যমে সারাদেশের খামারিরা অনলাইনে পশু প্রদর্শন ও বিক্রির সুযোগ পেতেন। পাশাপাশি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) চালু করে ‘ডিজিটাল হাট’ নামের আরেকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সহযোগিতা করেছিল।
কিন্তু পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও সরকারি ওয়েবসাইটটির কাঠামো বা সেবায় উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। গ্রাহকরা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতেই পারছেন না। অনেক সময় সাইটটি পুরোপুরি ডাউন থাকছে। গ্রাহকসেবা ব্যবস্থাও অনিয়মিত।
রাজশাহীর একজন ছোট খামারি তরিকুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, “করোনার সময় আমি সরকারিভাবে খোলা ডিজিটাল হাটে এন্ট্রি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। এখন তো সাইটেই ঢোকা যায় না। তাই নিজেই ফেসবুক পেজে পোস্ট দিই, যদিও তেমন বিক্রি হয় না।”
এমন অভিজ্ঞতা আরেক খামারি আব্দুর রহমানেরও। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, “সরকারি সাইটে গরুর তথ্য দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ওয়েবসাইটই ওপেন হয়নি।”
বেসরকারি ও খামারি পর্যায়ে জমজমাট অনলাইন হাট
সরকারি উদ্যোগ যেখানে মুখ থুবড়ে পড়েছে, সেখানে ব্যক্তিগত খামার ও বেসরকারি অনলাইন হাটগুলো এখন ক্রেতা ও বিক্রেতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হয়ে উঠেছে। বাজারে জনপ্রিয় অনলাইন হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে: বেঙ্গল মিট ডটকম, বিক্রয় ডটকম, অথবা ডটকম, রাখালী ডটকম, প্রাণীসেবা ডটকম, গরুরহাট ডটকম, গবাদি ই-হাট ডটকম, গাবতলী গরুরহাট ডটকম, মর্নিং এগ্রো, সামারাই এগ্রো, বায়োমেন্ডহাট ডটকম ইত্যাদি।
এই প্ল্যাটফর্মগুলো শুধু অনলাইন মার্কেটিংই নয়, বরং পশুর বিস্তারিত ছবি, ভিডিও, ওজন, খাদ্য তালিকা, স্বাস্থ্যপরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্যসহ পূর্ণাঙ্গ ডেটা উপস্থাপন করছে, যা ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জনে সহায়তা করছে।
সামারাই ক্যাটল ফার্মের সিইও মাহিন মিজবাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, “গত বছর অনলাইনে ৫৫টি গরু বিক্রি করেছি। অনেক কাস্টমার রিপিট করেছেন। এবারও বিক্রি হচ্ছে, তবে আগের তুলনায় একটু কম। ঈদের বাকি সময়গুলোতে বেচাবিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করছি।”
মর্নিং এগ্রোর কর্মী মোহাম্মদ সাব্বির ঢাকা মেইলকে বলেন, “আমাদের বেশিরভাগ কাস্টমারই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে আসে। ক্রমেই মানুষের আস্থা বাড়ছে অনলাইন হাটের প্রতি।”
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অবস্থান
দফতরটির সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, অধিদফতরের তালিকাভুক্ত ৩৫৯টি অনলাইন হাট রয়েছে। পর্যবেক্ষণে এসব হাটের বেশিরভাগই বর্তমানে নিষ্ক্রিয় বা অকার্যকর হিসেবেই পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে অনলাইন পশু হাটের প্রসার হচ্ছে বটে, তবে সরকারি উদ্যোগ এখানে কার্যত ব্যর্থ। অপরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণ, দুর্বল অবকাঠামো এবং প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এই ব্যর্থতার মূল কারণ। অথচ ব্যক্তিগত ও বেসরকারি পর্যায়ে সফল মডেল রয়েছে। যেগুলো সরকারি উদ্যোগের জন্য অনুসরণীয় হতে পারত। সময় এসেছে সরকারিভাবে প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতা আনা এবং ছোট খামারিদের জন্য কার্যকর অনলাইন বিক্রয় প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ইনফরমেশন ও আইটি কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, “অনলাইন পশু হাট অবশ্যই সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র। আমরা প্রতিবছর অনলাইনে সক্রিয় থাকা প্ল্যাটফর্মগুলোর তালিকা ওয়েবসাইটে দিই। তবে মূল সরকারি সাইটটির দেখভাল করছে এটুআই।”
এমআই/ইএ