images

অর্থনীতি

চাকরিচ্যুত কর্মীদের আন্দোলন, যা বলছে ব্র্যাক ব্যাংক

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

০৮ মে ২০২৫, ০৫:১৫ পিএম

চাকরি ফিরে পেতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে যাচ্ছেন ব্র্যাক ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মীরা। সেই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (৮ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের গাড়ি আটকে আন্দোলন করেন তারা। এতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। 

এসব কর্মীদের চাকরিচ্যুতির বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, কিছু কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছর একটি অডিট সম্পন্ন করে। তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদামত সব ধরনের তথ্য সরবরাহ করে ব্র্যাক ব্যাংক। এটি একটি পারফরমেন্স ভিত্তিক ব্যাংক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক পরিবারের অংশ হিসেবে ব্যাংকটি মেধাভিত্তিক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। 

ব্যাংকের পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষেত্রে শ্রম আইন ও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত বিধিবিধান কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। যেসব কারণে ব্র্যাক ব্যাংকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়ে থাকে তা হলো– ১. পদত্যাগ ২. অবসরগ্রহণ, ৩. কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ৪. চাকরির শর্ত অনুযায়ী নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে, যা একজন কর্মীকে নিয়োগ দেওয়ার সময় বুঝিয়ে দেওয়া হয়। 

গত পাঁচ বছরে (২০২০-২০২৪) ৪,৯৭৩ কর্মকর্তা যোগদান করেছেন এবং ৪,০৩৩ জন কর্মকর্তা ব্যাংক থেকে চলে গেছেন। এর মধ্যে মাত্র ২৪৯ জন পারফরমেন্সের কারণে ও ২৩১ জন শৃঙ্খলাজনিত কারণে অব্যাহতি পেয়েছেন। ৯,০৬৮ কর্মীবাহিনীর প্রতিষ্ঠানে বিগত পাঁচ বছরে পারফরমেন্স এবং শৃঙ্খলাজনিত কারণে চাকরি থেকে অব্যাহতির এই সংখ্যা অতি সাধারণ। বাকি ৮৮ শতাংশ কর্মকর্তা নিজের ক্যারিয়ার সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।

ব্র্যাক ব্যাংক জানিয়েছে- নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে ব্র্যাক ব্যাংক কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে এবং তাদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া সাপেক্ষে একটি পর্যায়ক্রমিক পারফরম্যান্স মূল্যায়ন রেকর্ড তাদেরকে অবহিত করা হয়। তাদেরকে একটি যথোপযুক্ত সময় দিয়ে উন্নত পারফর্মেন্সের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে, যে সকল কর্মী তাদের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হন, তাদেরকে নিয়মিত পারফরমেন্স উন্নতি করার জন্য চিঠি প্রদান করা হয়, যা সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া দ্বারা পরিচালিত। এই সকল চিঠিতে তাদের লক্ষ্যের বিপরীতে অর্জিত পারফরম্যান্সের রেকর্ড সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। কিন্তু যখন দেখা যায় নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কোচিংয়ের পরও যেসকল কর্মী কোনভাবেই উন্নতি করতে পারছেন না বা দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিজেদের কোন প্রচেষ্টা নেই, তখন প্রচলিত নিয়ম মেনে তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এখানে কোন ধরনের বৈষম্য ও পক্ষ্পাতদুষ্টতার কোনো সুযোগ নেই। ব্যাংকের বোর্ডের অনুমোদিত পলিসি অনুযায়ী সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সাথে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এছাড়াও কোনো কর্মীর বিরুদ্ধে অসদাচরণ বা শৃঙ্খলাজনিত কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে, ব্যাংক শ্রম আইন ও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত বিধিবিধান অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাযথ নিয়মে অবহিত করে। 

এছাড়া তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আউটসোর্সড হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ব্যাংকে অনেক অস্থায়ী কর্মকর্তা কাজ করেন। বর্তমানে মোট ৩,৯৯২ জন আউটসোর্সড কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আউটসোর্সড হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও, পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নীতিমালা অনুযায়ী তাদের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। এখানে উল্লেখ যে, বিগত কয়েক বছরে ব্র্যাক ব্যাংক প্রায় ১,২০০ আউটসোর্সড কর্মীকে ব্যাংকের প্রয়োজন ও নীতিমালা অনুযায়ী স্থায়ী হিসেবে নিয়োগ করেছে। স্থায়ী কর্মীদের অনুরূপ, পারফরমেন্সের ভিত্তিতে প্রতিবছর একটি পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের স্থায়ীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সকল আউটসোর্সড মানবসম্পদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন আছে।  এছাড়াও আউটসোর্সড কর্মী হিসেবে অফিস সহকারী, ক্লিনার, ড্রাইভার ও সিকিউরিটি পার্সোনেল ব্যাংকে কাজ করেন।

টিএই/এএইচ