images

অর্থনীতি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশই ব্যাংকই বার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত করেনি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

০৪ মে ২০২৫, ১০:৪৫ এএম

দেশে বর্তমানে ৬১টি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি ৯টি এবং সরকারি ৯টি। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কেবল রূপালী ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ৪৩টি ব্যাংকের মধ্যে তালিকাভুক্ত ৩৬টি। এর মধ্যে অধিকাংশ ব্যাংকই এখনো বার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত করতে পারেনি। গত ৩০ এপ্রিল আর্থিক বিবরণী চূড়ান্ত করার নির্ধারিত সময় ছিল। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এ রকম ২৫টি ব্যাংকের মধ্যে বেশির ভাগের একই অবস্থা। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার প্রকৃত আর্থিক চিত্র দেখানোর বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আরেক দিকে প্রভিশন সংরক্ষণে বাড়তি সময় নেওয়া ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারবে না–এমন কঠিন শর্ত দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিবরণী চূড়ান্ত করার সময় এক মাস বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক বিবরণী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এবার আর কোনো শিথিলতা দেখায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে বার্ষিক আর্থিক বিবরণী চূড়ান্ত করার সময় অনেক বিষয় ছাড় দেওয়া হতো। এর ওপর আবার ডেফারেল সুবিধা তথা নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে বাড়তি সময় দেওয়া হতো। এবার সব দিক দিয়ে কঠোরতার কারণে অনেক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে। এসবের বিপরীতে প্রভিশন হিসাব করতে হচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে নিয়মিত দেখানো খেলাপি ঋণের বিপরীতেও প্রভিশন রাখতে বলা হয়েছে। আবার ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিংবা অন্য ব্যাংকে আটকে থাকা আমানতের বিপরীতেও প্রভিশন হিসাব করা হয়েছে। যে কারণে বেশির ভাগ ব্যাংক প্রভিশন রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৩ মার্চ এক নীতিমালায় জানায়, প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডেফারেল সুবিধা নেওয়া ব্যাংক ২০২৪ সালের জন্য লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এই শর্ত থেকে ছাড় পাওয়ার চেষ্টা করছে অনেক ব্যাংক। কোনো কোনো ব্যাংক একবারে এত কঠোরতা না দেখানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ওয়াশিংটন থেকে দেশে ফিরেছেন। আজ রোববার থেকে তিনি অফিস করবেন। আজ আর্থিক বিবরণী চূড়ান্ত করার সময়সীমা এক মাস বাড়ানোর চিঠি দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানার রূপালী ব্যাংকের বাইরে বিবরণী চূড়ান্ত না হওয়া বেসরকারি ব্যাংকগুলো হলো- ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা, মার্কেন্টাইল, এনসিসি, ওয়ান, শাহ্‌জালাল ইসলামী, সাউথইস্ট, ইউসিবি, আল-আরাফাহ ইসলামী, স্ট্যান্ডার্ড, প্রিমিয়ার, এক্সিম, আইএফআইসি, এবি, ন্যাশনাল, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ও গ্লোবাল ইসলামী। নতুন প্রজন্মের ইউনিয়ন, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, এনআরবি কমার্শিয়াল এবং এনআরবি ব্যাংক এ তালিকায় আছে।

বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে ১২টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মধ্যে দীর্ঘদিন লোকসানে থাকা আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবারও কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। আর লভ্যাংশ দিয়েছে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক, সিটি, ইস্টার্ন, পূবালী, ডাচ্‌-বাংলা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ট্রাস্ট, যমুনা, প্রাইম, উত্তরা ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকের দেওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে। মোট ঋণের যা ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় যা ২ লাখ ১৩১ কোটি টাকা বেশি। এখন হিসাব বিবরণী চূড়ান্ত করতে গিয়ে খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে।

টিএই/এএস