নিজস্ব প্রতিবেদক
২৫ মার্চ ২০২৫, ০৮:৫৮ এএম
বিদেশি পোশাকের বিপুল সমাহার রাজধানীর নয়াপল্টনের পলওয়েল মার্কেট। সত্তরের দশকের এই মার্কেটে সাধারণত কেনাকাটা করে থাকেন ধনিক শ্রেণির মানুষেরা। নারী, পুরুষ ও শিশুদের বিদেশি পোশাক ও জুতা, বেল্ট, কেডসসহ নানা সামগ্রী বিক্রি হয় এখানে। এসব সামগ্রীর বড় অংশ আমদানি করা হয় চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, কোরিয়া, ইংল্যান্ড, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে।
ভিনদেশি পণ্যের জন্য মার্কেটটির আলাদা পরিচিতি ও সুনাম রয়েছে। এখানে মানুষের ভিড় থাকলেও আশানুরূপ বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রমজানের শেষের দিকে কেনাকাটা জমে উঠবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।
একাধিক ব্যবসায়ী জানান, পলওয়েল মার্কেটের একটা সুনাম রয়েছে। পুরোনো জৌলুশ থাকলেও আগের মতো বেচাকেনা নেই। আশপাশে বড় বড় অনেক মার্কেট হয়ে গেছে। বেড়েছে প্রতিযোগিতা। ফলে এখানে খুচরা বিক্রি কমলেও বিদেশি পণ্য থাকায় পাইকারি বিক্রি আগের মতোই আছে।
এদিকে পোশাকের গুণগত মান নিয়ে তেমন প্রশ্ন না থাকলেও বিদেশি ব্র্যান্ডের নামে অতিরিক্ত দাম হাঁকেন বিক্রেতারা-এমন অভিযোগ ক্রেতাদের। ফলে মার্কেটটিতে এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে খুচরা কেনাবেচা তুলনামূলক কম। এছাড়া চলতি বছর নানা কারণে বিদেশি পণ্যবিমুখিতা দেখা গেছে ক্রেতাদের মাঝে। যার ফলে দেশীয় পোশাকের বাজার বেড়েছে। ক্রেতারাও ঝুঁকছে দেশীয় পণ্যে। তবে বিদেশি সব পণ্য এক জায়গায় পাওয়া যাওয়ায় পাইকাররা ছুটে আসেন ঐতিহ্যের এই পলওয়েলে।
ষাট বছরের পুরনো এই মার্কেটে সময়ে সময়ে ব্যবসার ধরন পাল্টেছে। তার সঙ্গে পরিসরও বেড়েছে মার্কেটটির। ১৯৮৮ সালে এসে মার্কেট সম্প্রসারণ হলে দোকানের সংখ্যা ৩৩ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬৫টিতে। মার্কেটটির ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিসর বড় হওয়ার পর নব্বইয়ের দশকে জমজমাট হয় বেচাবিক্রি। যেহেতু এই মার্কেটের পণ্যের বড় অংশই ছিল আমদানিনির্ভর, সেজন্য দেশের প্রায় সব এলাকার ব্যবসায়ীরা এই মার্কেটে আসতেন পাইকারিতে পণ্য কিনতে। ২০১০ সাল পর্যন্ত রমরমা ব্যবসা করেছেন এখানকার প্রায় সব ব্যবসায়ী। ২০১০ সালের পর থেকে পণ্য আমদানি সহজ হয়ে গেলে পলওয়েলের ব্যবসায়ও ভাটার টান লাগে। কারণ, দেশজুড়ে পণ্য আমদানিকারকের সংখ্যা বেড়েছে। তাতে পলওয়েলের একচেটিয়া ব্যবসা খর্ব হয়। তবে এখনো পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা করছে পুলিশের মালিকানাধীন এই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
পলওয়েল মার্কেটের ব্যবসায়ী মামুনুর রশিদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা চাই বেশি পরিমাণে বিক্রি, স্বল্প মুনাফা। আমরা সর্বোচ্চ ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা মুনাফা করি। জিন্স, গ্যাবার্ডিন, থাইল্যান্ডের পোশাক, ইন্ডিয়ান প্যান্ট, শার্ট, টিশার্ট আছে। এসব বরাবরই ভালো বিক্রি হয়।’
যদিও পলওয়েল মার্কেটে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগ অনেক পুরনো। আমদানি করা পণ্যের যথাযথ ডকুমেন্ট খুব কম দোকানেই আছে। অধিকাংশ পোশাকের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) লেখা না থাকায় হাঁকা হচ্ছে চড়া মূল্য। সম্প্রতি ভোক্তা-অধিকার অধিদফতরের অভিযানেও এই চিত্র ধরা পড়েছে। আমদানিকারকের নাম ঠিকানা তো নেইই এমনকি মূল্যতালিকাও দেখাতে পারেননি পলওয়েল মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
বিক্রেতারা বলছেন, বার কোড স্ক্যান করলে সব তথ্য পাওয়া যাবে। কিন্তু স্ক্যান করেও ভোক্তা-অধিকার কোনো তথ্য পায়নি। পরে দুই দোকানিকে জরিমানা করে অভিযান পরিচালনা টিম।
লতিফুর রহমান নামে অপর ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের মার্কেটে নানা বৈচিত্র্যের পোশাকের বিপুল সংগ্রহ রয়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা আলোকে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতিও রয়েছে। ক্রেতাদের চহিদা, পোশাকে ক্রেতার রুচি ও আবহাওয়াকে লক্ষ্য রেখে কালেকশন করি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বেচাকেনা মোটামুটি হচ্ছে। রোজার শেষের কয়েক দিনে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছি।’
বনশ্রী থেকে আসা রাব্বি ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘প্রতি বছরই পলওয়েল থেকে কেনাকাটা করি। এবছরও এসেছি। ঘুরে ঘুরে দেখছি আর পছন্দ করছি। বোনের জন্য ত্রি-পিচ, মায়ের জন্য শাড়ি ও নিজের জন্য শার্ট নেব এখান থেকে।’
এই ক্রেতা বলেন, ‘দাম বেশি হলেও কোয়ালিটির দিক দিয়ে পলওয়েলের পণ্য ভালো। তবে কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দাম মনে হয়।’
সরেজমিনে দেখা যায়, পলওয়েল মার্কেট মূলত শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদের হাল ফ্যাশনের পোশাকই পাওয়া যাচ্ছে বেশি। ছোট-বড়দের থ্রি পিস, শর্ট ও লং লেহেঙ্গা, বোম্বের পাঞ্জাবি, পাকিস্তানি থ্রি পিস, ছেলেদের শার্ট, জুতা, কেডস পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া মেয়েদের জুতা-স্যান্ডেলও আছে।
পলওয়েল মার্কেটের নিচতলাতে জুতা ও মহিলাদের আইটেম পাওয়া যাচ্ছে। আর নিচতলা ও দোতলার দোকানগুলোতে সাধারণত খুচরা বিক্রি হয়। তৃতীয় তলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত রয়েছে পাইকারির পাশাপাশি খুচরা বিক্রির ব্যবস্থা। প্রথম দুটি ফ্লোরে রয়েছে নারী-পুরুষ ও শিশু আইটেমের সমাহার। তৃতীয় তলা থেকে দোকানগুলো বেশিরভাগই বিশেষায়িত। যে দোকানে প্যান্ট বিক্রি হয়, তারা শুধু প্যান্টই বিক্রি করেন। আবার যারা জুতা তুলেছেন, তারা জুতাই বিক্রি করেন।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মার্কেটটিকে সাদামাটাভাবে সাজানো হয়েছে। ক্রেতা সাধারণের ভিড় বাড়ায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এমআর/জেবি