images

অর্থনীতি

বার্ষিক করমুক্ত আয় সীমা ৪ লাখ করার সুপারিশ সিপিডির

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

১৬ মার্চ ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম

images

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ পর্যন্ত করার সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা আছে। যা আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে ৫০ হাজার টাকা বাড়ানোর কথা বলেছে সিপিডি।

রোববার (১৬ মার্চ) সিপিডি’র ধানমন্ডি কার্যালয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট সুপারিশকে কেন্দ্র করে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এসময় সিপিডির সম্মানোনীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও গবেষক মুনতাসীর কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতির তুলনায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেশি। এছাড়া, শহরের চেয়ে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি। সাধারণ মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো যৌক্তিক বলে আমরা মনে করি। আগামী অর্থবছরে এটি বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুন শেষে মূল্যস্ফীতির হার ৭-৮ শতাংশে এ নামিয়ে আনার যে পরিকল্পনার কথা বলেছে, সেটি অর্জন করা অসম্ভব হবে। কারণ এটি বাস্তবসম্মত নয়। মূলত বোরো চাষ, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও অনান্য বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। আর বাস্তবায়ন গত কয়েক বছর ধরে সম্ভব হয় নি। 

বর্তমান ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের ওপর ৫, ১০, ১৫, ২০ ও ২৫ শতাংশ হারে কর ধার্য করা রয়েছে। প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকার ওপর কর নেই। পরের প্রথম এক লাখ টাকার জন্য ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ এবং বাকি অর্থের ওপর ২৫ শতাংশ হারে কর বসবে। এছাড়া মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা হলো চার লাখ টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা হবে পৌনে পাঁচ লাখ টাকা। গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ টাকা হবে। আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যক সন্তান বা পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা আরও ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে।
এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি এবং চট্টগ্রাম সিটির এলাকায় অবস্থিত করদাতার জন্য ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা, অন্য সিটির করদাতার জন্য ৪ হাজার টাকা এবং সিটি করপোরেশন ব্যতীত অন্য এলাকার করদাতার জন্য ৩ হাজার টাকা দিতে হবে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ১ কোটি ১১ হাজারের মতো লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএনধারী) আছেন। চলতি অর্থবছরে প্রায় ৪০ লাখ করদাতা রিটার্ন দিয়েছেন।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমানে দেশে রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক দুর্বলতা রয়েছে। বিশেষ করে সহজ কর নীতি দরকার। পাশাপাশি নেট বাড়াতে হবে। বর্তমানে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ। তাহলে লক্ষণীয় যে বাস্তবতার সঙ্গে অর্জনের বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। এটা প্রতিবছর করা হয়। এটি দূর করতে হলে সামনে আদায়ের প্রবৃদ্ধি হতে হবে ৫৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। যা আদায় করা অসম্ভব। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় কিছুটা গতি পেয়েছে। এদিকে জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে রাজস্ব ঘাটতি ২৯ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা। আর গত বছর সেই ঘাটতি ছিল ৭ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বেশি অর্থ নেওয়া হয়েছে। 

মূল্যস্ফীতির বিষয়ে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে গড়ে মূল্যস্ফীতি কমেছে। যা ছিল প্রায় ৯ শতাংশের কাছাকাছি।  তবে গ্রামে এর চেয়ে বেশি ছিল। পক্ষান্তরে শহরে মূল্যস্ফীতি খানিকটা কম লক্ষ করা গেছে। আবার খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি ছিল। তবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন পেলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। তখন মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা থাকবে না। আর মূল্যস্ফীতির চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য কোনোভাবে অর্জন করা যাবে না।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রায় একটা স্থিতিশীলতা এসেছে। যদিও বৈদেশিক বিনিয়োগ সম্প্রতি হ্রাস পেয়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ।  তবে রফতানি আয়ে ভালো সাড়া মিলেছে। চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ। মূলত বৈদেশিক খাত পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা গেছে। এতে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। তবে আগামি বাজেটে বিদেশি অর্থায়ন পাওয়া কঠিন হবে। কারণ তারা সরকারের এডিপি বাস্তবাযন পর্যবেক্ষণ করবে। আর নীতিগতভাবে তেমন সংস্কার হয়নি। যা বিনিয়োগকারীদের নতুন বিনিয়োগে নতুন চিন্তার খোরাক যোগাবে।

টিএই/এফএ