নিজস্ব প্রতিবেদক
০৩ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৬ এএম
প্রতিবছর রমজান এলেই হাতের নাগালের বাইরে চলে যায় সব খাদ্যপণ্যের দাম। বিশেষ করে বুট, ছোলা, ডাল, চিনি, মরিচ ও মাছ-মাংসের দাম হয়ে যায় দ্বিগুণ। ফলে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে বছরের এই সময়টায় একটু ভালো কিছু খাওয়ার চেষ্টা কষ্টকর হয়ে যায়। তবে এবছর রমজানে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে হলেও বাধ সেধেছে ভোজ্যতেল সয়াবিন। বলতে গেলে বাজার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল একপ্রকার উধাও।
ভোক্তারা বলছেন, দাম বাড়াতেই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্যতেলের সরবরাহ অনেক কম। ফলে সংকট তৈরি হয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে হাহাকার ভোজ্যতেলের জন্য। দোকানে দোকানে ঘুরেও মিলছে না এক লিটার, দুই লিটার সয়াবিন তেল। পাঁচ লিটার কয়েকটি দোকানে পাওয়া গেলেও তা আদৌ সয়াবিন নয়। মিলছে পামওয়েল কিংবা সানফ্লাওয়ার ওয়েল।
রোববার (০২ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মুদি দোকানগুলো ঘুরে এমন চিত্র মিলে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিছু দোকানে দৃশ্যমান স্থানে ভোজ্যতেল প্রদর্শন করা হচ্ছে না। তেল নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতাকে। কিন্তু তল্লাশিতে দোকানের গোপনীয় স্থানে বিপুল পরিমাণে ভোজ্যতেলের পাঁচ লিটারের বোতল মজুদ পাওয়া গেছে। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ভোক্তার চাহিদা বেশি থাকায় মেয়াদোতীর্ণ তেলও বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভোক্তা অধিদফতর বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে উৎপাদিত ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল যার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বা এমআরপি ৮১৮ টাকা। কিন্তু তদারকিতে দেখা গেছে, কিছু ব্যবসায়ী তা বিক্রি করছেন ৮৫০ থেকে ৮৫২ টাকায়। আবার অনেকে দামের লেভেল মুছে দিয়েও বিক্রি করছেন। তাছাড়া কিছু ব্যবসায়ী তেল লুকিয়ে রেখে গোপনে বেশি দরে বিক্রি করছেন। এসব অপরাধে কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেটের সম্প্রতি সাতটি প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মায়ের দোয়া স্টোরের মালিক ঢাকা মেইলকে বলেন, রমাজনে তেলের চাহিদা বেশি। কিন্তু আমরা চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছি না। গতকাল অনেক অনুরোধ করে এক কার্টুন তেল পেয়েছি তা নিমিষেই শেষ।
সুমন নামের আরেক ব্যবসায়ী জানান, সরবরাহ ঘাটতি থাকায় ব্যবসায়ীরা গ্রাহকের তোপের মুখে পড়ছেন। কোম্পানিগুলো আমাদেরকে তেল না দিলে আমরা কীভাবে দেব।
বেসরকারি চাকরিজীবী আবু বকর রমজানের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে আসেন কারওয়ান বাজারে। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, অন্য বাজারের তুলনায় কারওয়ান বাজারে ৫-১০ টাকা কমে জিনিসপত্র পাওয়া যায়। এজন্য এখানে এসেছি। সবজি, মাছ মোটামুুটি সহনীয় দামে পেলেও লেবুসহ কয়েকটি পণ্যে অস্বাভাবিক দাম হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, মুদি পণ্যের মধ্যে কয়েক দোকার ঘুরেও সয়বিন পেলাম না।
ভোক্তাদের অভিযোগ, রমজানকে কেন্দ্র করে দাম বাড়ানোর জন্যই ব্যবসায়ীরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে এ সংকট তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
এদিকে ভোক্তা অধিকার অধিদফতর বলছে, সয়াবিনের ঘাটতি রয়েছে। তবে রমজান শুরু হলেও সরকারি এই সংস্থাটি বাজারে সয়াবিন ঘাটতির কারণ নিরুপণ করতে পারেনি। অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান রোববার সাংবাদিকদের বলেন, সয়াবিন তেলের পাইকারি বা সরবরাহ পর্যায়ে কোনো ধরনের সংকট আছে কি না সেটা জানার জন্য একটু সময় প্রয়োজন হবে। আমরা একটা তদন্ত কমিটি করব। তদন্তের পর জানাতে পারব পারব সংকট আছে কি না। সয়াবিন তেল পর্যাপ্ত থাকলে মানুষ স্বস্তিতে থাকবে।
আরও পড়ুন-
ভোক্তার ডিজি বলেন, আমরা আজ কাওরান বাজারে খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলো পরিদর্শন করলাম। দোকানিদের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারলাম, সয়াবিন তেল ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের সংকট নেই। গত বছরের তুলনায় দাম এ বছর কিছুটা কমতির দিকে। তাই দোকানিরা চাহিদা মেটাতে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন। রমজানে অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। স্বাভাবিকের তুলনা এ মাসে চাহিদা বাড়ে।
যদিও সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের একটি অংশ এখনো সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। ভোজ্যতেল নিয়ে যারা দুষ্টামি করে বা ভোক্তার স্বার্থবিরোধী কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোক্তার ডিজি বলেন, ভোজ্যতেলের সরবরাহে কিছু ব্যবসায়ী অসহযোগিতা করছেন, যা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে পারে। এই সংকটের কারণ খুঁজতে বন্দর থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এছাড়া ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী তিনটি কোম্পানিকে এরই মধ্যে শোকজ করা হয়েছে। তারা লিখিত জবাবও জমা দিয়েছে। এগুলো পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এমআর/ইএ