বোরহান উদ্দিন
০২ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৫ এএম
দিনভর রোজা রেখে ইফতারের প্লেটে দেশি-বিদেশি ফল রাখতে চাইলে ভোক্তাদের গুনতে হবে বাড়তি টাকা। সব ধরনের ফলের দাম অন্য সময়ের চেয়ে বেড়েছে। বাজার ঘুরে পণ্যভেদে কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ার তথ্য মিলেছে। তবে দেশি ফলের মধ্যে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে পাকা পেঁপে যেন সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। কারণ রোজা আসতেই কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে সর্বনিম্ন ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। দুদিন আগেও পাকা পেঁপে যেখানে বিক্রি হয়েছে ৯০-১০০ টাকা কেজি দরে, সেখানে শনিবার রাতে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে। থাই পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা কেজি দরে।
রাজধানীর একাধিক বাজার, ফলের দোকান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
দোকানিরা বলছেন, চাহিদা বাড়ায় পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রিও বেশি দামে করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, বাজার মনিটরিং না থাকার পাশাপাশি অতি মুনাফার কারণে বাজারে জিনিসপত্রের দাম এত বেশি বাড়ছে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোজায় খেজুরের পাশাপাশি আপেল, নাশপাতি, আঙুর, কমলা, মাল্টার চাহিদা অন্য সময়ের চেয়ে বেড়ে যায়। কিন্তু বাড়তি শুল্ক-করের কারণে এ বছর বিদেশি ফল আমদানি কমে গেছে।
গত মাসে ফল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ১০০ টাকার ফল আমদানি করলে ১৩৬ টাকা শুল্ক-কর দিতে হয়। ফলে ভোক্তাদেরও বেশি দাম দিয়ে ফল কিনতে হচ্ছে।
ঊর্ধ্বমুখী বিদেশি ফলের দাম
সেগুনবাগিচা, গুলিস্তান, ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকার একাধিক দোকানি জানিয়েছেন, গত তিন-চার দিনের মধ্যে প্রায় সব ধরনের ফলের দাম কেজিতে ২০-৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বাজারে কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি। সবুজ আঙুর ৩৫০, লাল আঙুর ৬০০ টাকা। অথচ কয়েকদিন আগেও ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে মিলত এক কেজি আঙুর।
মাঝারি আকারের বেদানার কেজি ৪৫০ টাকা। মাল্টার কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। অথচ কয়েকদিন আগেও যা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
আপেলের মধ্যে লালটা কেজি ৩০০ টাকা। সবুজ আপেল কিনতে গুনতে হবে ৪০০। আর এক কেজি নাশপাতি খেতে হলে লাগবে ৩৫০ টাকা।
সেগুনবাগিচার ফল বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, দাম খুব বাড়ছে বলা যাবে না। আগে রোজায় দাম অনেক বাড়ত। গত সপ্তাহের তুলনায় কিছু বাড়ছে এটা সত্য।
কেন দাম বাড়ছে তার কোনো সদুত্তর দিতে না পেরে তিনি এজন্য আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতাদের ওপর দোষ চাপিয়েছেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী মোশারেফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, তিনদিন আগে ২৭০ টাকা করে মাল্টার কেজি কিনেছি। আজকে (শনিবার) এসে দেখি ৩০০ টাকা। এটা তো বিদেশ থেকে বাড়তি দামে নতুন করে আসেনি। তারপরও কেন দাম বাড়বে?
ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকার ফল বিক্রেতা আব্দুর রহিম ঢাকা মেইলকে বলেন, বাদামতলি ফল কিনতে যাওয়ার আগে চিন্তায় থাকি কোন জিনিসের দাম কত বাড়বে। রোজার সময় এই চিন্তা আরও বাড়ে। কিছু ফল আগে কেনা ছিল। দামও একটু কম ছিল, বিক্রিও কম দামে করতে পারছি। নতুন ফল কিনতে গেলে বেশি দাম লাগবে এটা জানি।
দেশি ফলে সবাইকে ছাড়িয়ে পাকা পেঁপে
একই বাজারের দেশি ফলের বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বেল, তরমুজ, বাঙ্গি, আনারস, পাকা পেঁপে নিয়ে বসেছেন। দামের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘কোনো কিছু বলার নাই। ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি পাকা পেঁপে আনতাম। ৯০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি করতাম। আজকে কারওয়ান বাজার থেকে কিনেছি খরচসহ ১৩০ টাকা। আপনারাই বলেন এই পেঁপে বেচবো কত?’
তিনি বলেন, ‘থাই পেঁপে ২০০ টাকার বেশি বিক্রি না করলে পুরো লস খেতে হবে।’
বেলের দামও অন্য সময়ের চেয়ে বাড়তি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
তবে বাজার ঘুরে অনেকটা আগের দামে তরমুজ, আনারস, বাঙ্গি বিক্রি করতে দেখা গেছে। তরমুজের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, আনারস প্রতি পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বিইউ/এএস