images

অর্থনীতি

নিম্নবিত্তের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ডিম!

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

১১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৯ এএম

‘গত এক মাস থেকে একটি ডিমও কেনা সম্ভব হয়নি। কারণ, যে হারে ডিমের দাম বাড়ছে তাতে ডিম কিনে খাওয়া অসম্ভব। তাই একটু মাছ কিনলাম। এটুকু রান্না করেই আমরা দুই বেলা ভালভাবে ভাত খেতে পারব।’

কথাগুলো বলছিলেন রিকশাচালক তারেক আহমেদ (ছদ্মনাম)। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাত দশটা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে যা রোজগার করেছেন, তা নিয়েই বাজারে ঢুকেছেন তিনি।

ডিমের দাম যখন আকাশচুম্বী, সেই মুহূর্তে ডিম কেনার সামর্থ্য নিয়ে আক্ষেপের কথা বলছিলেন তিনি। তার চোখে-মুখে বিষণ্ণতার ছাপ। যেন এক রাজ্যের ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন তিনি। তখনো তার বাম হাতে ঝুলছিল হাফ কেজি পঁচা সামুদ্রিক মাছের পোটলা।

রায়ের বাজার পাইকারি সবজির আড়তের পাশের কাঁচাবাজারে ভেতর তার সাথে কথা হচ্ছিল এই প্রতিবেদকের। তার হাতের মাছের পোটলাটি দেখিয়ে বলেন, ‘ভাই কিছু তো কিনতে পারি না। সবকিছুর দাম বেশি। করব কী বলেন! কিছু তো খেতে হবে। তাই এটুক মাছ নিলাম।’

eggs1

তার সাথে কথা বলে জানা গেল, দুই ছেলে সন্তান আর স্ত্রী নিয়ে রায়ের বাজারের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। যখন ডিমের দাম বাড়ে, তখন তার পক্ষে কেনা অসম্ভব হয়ে যায়।

সম্প্রতি শুধু ডিম নয়, বেড়েছে কাঁচা সবজির দামও। সবকিছুরই তো দাম বেড়েছে। তাই কী খান জানতে চাইলে সরল তার উত্তর, ‘কী খাব ভাই!পেঁপে কিনে খাই। তাছাড়া তো সবকিছুর দাম বেশি।’

আরও জানালেন, মাঝে ডিমের দাম কিছুটা কম হওয়ায় ডিম কিনতে পেরেছিলেন। কিন্তু সেটাও কিছুদিন। আর এখন ডিম পাতে তুলবেন, তা কল্পনাও করতে পারছেন না।

ডিম কেনার সামর্থ্য নেই তারেকের। ফলে বাজারে ঢুকে পুরো বাজার ঘুরে পঁচা মাছ নিয়ে বের হচ্ছিলেন বাসার দিকে যাবেন বলে। সেই মুহূর্তে তার সাথে দেখা হয়। তার কথাগুলো শেষ হওয়ার পর যাওয়ার সময় মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু বললেন, ভাই দোয়া কইরেন আমাদের জন্য। আমরা তো গরীব মানুষ, এসব কষ্টের কথা কার কাছে বলব!

eggs2

তারেকের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায়। গত ১০ বছর ধরে তিনি ঢাকায় রিকশা চালান। কিন্তু ডিমের এমন বাড়তি দাম কখনো দেখেননি। তার মতে, সরকার চাইলেই এই ডিমের বাজারকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে। এজন্য দরকার সদিচ্ছা ও কার্যকরী উদ্যোগ।

তবে তার সাথে কথা বলার আগে এই বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই বাজারের পাশেই ডিম বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান তামিম ও মায়ের দোয়া। প্রতিদিন দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার ডিম বিক্রি হয়। সম্প্রতি বাড়তি দামে ডিম বিক্রির কারণে তাদের জরিমানাও করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রতি ডিমে দেড় টাকা লাভ রাখতো। জরিমানার পরও তাদের শিক্ষা হয়নি, বলছিলেন মুরগি এক বিক্রেতা।

পরে তামিম এন্টারপ্রাইজের সামনে গিয়ে দেখা গেল, ক্রেতারা ডিম কিনতে আসছেন কিন্তু দাম শুনে অনেকে হতবাক হচ্ছেন। এ প্রতিষ্ঠানে মুরগির সাদা ডিম ১৫০ এবং লাল ডিম ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি মুরগির ডিম তো গগনচুম্বী দাম।

এমআইকে/এমএইচটি