images

অর্থনীতি

কমেছে আমানত-আমানতকারী, বেড়েছে ঋণ বিতরণ

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন

১৫ জুন ২০২৪, ১০:০১ পিএম

ব্যাংকিং খাতের পাশাপাশি খারাপ সময় যাচ্ছে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও। কমছে আমানত। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাচ্ছেন আমানতকারীরাও। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছেড়েছেন প্রায় চার হাজার আমানতকারী। আমানত কমেছে পাঁচশ কোটিরও বেশি। তবে বেড়েছে ঋণ বিতরণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বরে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলে মোট আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩১ হাজার ২২১, যা চলতি বছর মার্চ মাস শেষে নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৭ হাজার ৩৪১। এর মানে গত তিন মাসের ব্যবধানে খাতটিতে সার্বিক আমানকারীর সংখ্যা কমেছে ৩ হাজার ৮৮০। এরমধ্যে নারী আমানতকারী হিসাব সংখ্যা কমেছে ২ হাজার ৪৯০টি। তবে পুরুষ আমানতকারীর হিসাব বেড়েছে ৪২৮টি। অন্যদিকে একই সময়ে পুরুষ প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারী হিসাব কমেছে ১ হাজার ৮২৫টি। আর নারী প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারী হিসাব কমেছে ৩টি।

২০২৩ সালের মার্চে এ খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৫৫৪টি। চলতি বছরের মার্চে ৪ লাখ ২৭ হাজার ৩৪১ টি। এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে মোট আমানতকারী হিসাব কমেছে ৫৯ হাজার ২১৩টি। এর মধ্যে পুরুষ আমানতকারী হিসাব কমেছে ৪১ হাজার ৯৩০টি। আর নারী আমানতকারী হিসাব কমেছে ১৭ হাজার ৫৮৫টি। একই সময়ে পুরুষ প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারী সংখ্যা কমেছে ৮৩৭টি। তবে এ সময়ে নারী প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ১৩৯টি।

এদিকে টানা কয়েক মাস এ খাতে আমানত বাড়লেও চলতি বছর প্রথম তিন মাসে ৫২৫ কোটি টাকার বেশি কমেছে। গত বছর ডিসেম্বরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৪ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা, যা চলতি বছর মার্চ শেষে দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। এ সময় ব্যক্তি খাতের আমানত কমে হয়েছে ৪০ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা, যা গত বছর ডিসেম্বরে ছিল ৪১ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। ফলে তিন মাসের ব্যবধানে ব্যক্তি আমানত কমেছে ৭৬৬ কোটি টাকা। তবে একই সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক আমানত বেড়েছে ২৪০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে প্রাতিষ্ঠানিক আমানত ছিল ৩ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা, মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি বছরের তিন মাসে আট বিভাগের মধ্যে চার বিভাগে আমানত কমে গেছে। এগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ।

তবে মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত কমলেও বেড়েছে ঋণ বিতরণ। গত ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ বিতরণ ছিল ৭৩ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। সে হিসেবে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৭৭০ কোটি টাকা।

বর্তমানে দেশে ৩৪টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু আছে। এর মধ্যে তিনটি সরকারি, ১২টি দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানায় এবং বাকিগুলো দেশীয় ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত। এগুলোর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে তারল্য সংকটে। অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে, আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না কেউ কেউ। এর মধ্যে অন্তত ১৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা এখন নাজুক, যাদের ৩৩ থেকে ৯৯ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়ে পড়েছে। এ কারণে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে এ খাতে টানা কমছে আমানতকারীর সংখ্যা।

উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে ব্যাংকগুলো। তাই আমানতকারী সেদিকেই বেশি ঝুঁকছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান বলেন, আমানত কমার প্রধান কারণ হলো— ব্যাংকগুলো এখন উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। এজন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কিছু আমানতকারী এখান থেকে গিয়ে ব্যাংকে আমানত রাখছেন। তারা তো যেখানে বেশি মুনাফা পাবেন সেখানেই যাবেন। এটাই স্বাভাবিক।

টিএই