মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
২৭ মে ২০২৪, ০৯:৩১ পিএম
মেয়াদি ঋণের ৫ শতাংশ পরিবেশবান্ধব খাতে বিতরণের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই সাথে মোট ঋণের ২০ শতাংশ টেকসই প্রকল্পে দিতে বলা হয়েছে। টেকসই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কৃষি, সিএমএসএমই, পরিবেশবান্ধব কারখানা, সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল প্রকল্প ইত্যাদি। টেকসই অর্থায়নের মধ্যে রয়েছে পরিবেশবান্ধব খাতে যেকোনো ধরনের অর্থায়ন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে টেকশই খাতে অর্থায়ন কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। চলতি বছরের শেষে টেকসই খাতে ব্যাংকগুলোর দেওয়া ঋণের পরিমাণ কমেছে প্রায় ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘টেকসই খাতে অর্থায়ন’ শীর্ষক সর্বশেষ হালদাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন বলা হয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে এই খাতে ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৮৫ হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। গেল অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছিল ৮৭ হাজার ৮২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কমেছে ২ হাজার ৪৮৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এই খাতে ঋণ বিতরণ কিছুটা বেড়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) বিতরণ করেছে ৩ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা, গেল অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে বিতরণ করেছিল ২ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। বেড়েছে প্রায় ৪৮৩ কোটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রকল্পগুলোতে সামষ্টিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৬৯৬ কোটি। কিন্তু তিন মাস আগে অর্থাৎ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে এই বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে টেকসই অর্থনীতিতে দুই হাজার সাত কোটি টাকা বিনিয়োগ কমেছে। তবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে টেকসই খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ছিল ৩৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক টেকসই অর্থায়নে ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এনবিএফআই) উৎসাহিত করে আসছে। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি চার বছর ধরে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাসটেইনেবল রেটিং বা টেকসই মান প্রকাশ করছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই উদ্যোগ নিয়েছে। মূলত পাঁচটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই মান যাচাই করা হয়। সূচকগুলো হলো— টেকসই অর্থায়ন, সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম, পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে অর্থায়ন, টেকসই কোর ব্যাংকিং সূচক এবং ব্যাংকিং সেবার পরিধি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোট টেকসই বিনিয়োগের মধ্যে ৭ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে সবুজায়ন প্রকল্পে। ডিসেম্বর শেষে এই বিনিয়োগ ছিল ৭ হাজার ৪০৫ কোটি। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবাধানে সবুজ প্রকল্পে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ কমেছে ১৬৬ কোটি টাকা।
টেকসই উন্নয়নের যুগে এসে ব্যাংকগুলো পরিবেশ, গ্রিন হাউস ইফেক্ট, পরিবেশ দূষণ, প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার ব্যাপারে ভাবতে শুরু করেছে। এই ভাবনা থেকেই সবুজ ব্যাংকিং ধারণার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। প্রসার ঘটলেও তারল্য সংকটের কারণে কোনো খাতেই ঠিকমতো বিনিয়োগ করতে পারছে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে টেকসই অর্থায়নের লক্ষ্য অর্জনকারী শীর্ষ ব্যাংকগুলোর তালিকা তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক শীর্ষে রয়েছে। শীর্ষ দশের বাকি ৯টি হলো— ইস্টার্ন ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি), ন্যাশনাল ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক।
টেকসই অর্থায়নের লক্ষ্য অর্জনকারী শীর্ষ পাঁচ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো— ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্স, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, সিভিসি ফাইন্যান্স ও ন্যাশনাল ফাইন্যান্স।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, দেশের ব্যাংক খাতে তীব্র তারল্য সংকট বিরাজ করছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণের জোগান দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কারণ এর ফলে সংকুচিত হয়ে পড়ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বিপর্যয় দেখা দিয়েছে উৎপাদন খাতে। সৃষ্টি হচ্ছে না নতুন কর্মসংস্থান। অথচ সরকারি ও বেসরকারি খাত এবার ব্যাংক খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ঋণ নিয়েছে। মূলত অনিয়ম, দুর্নীতি ও আস্থাহীনতায় তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো।
টিএই