images

অর্থনীতি

গর্ত থেকে বের হচ্ছে সয়াবিন, এ যেন গুপ্তধন!

বোরহান উদ্দিন

১৬ মে ২০২২, ০১:৫৮ পিএম

রান্নার অন্যতম অনুসঙ্গ সয়াবিন তেল। যা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড়। বাজারে তেল নেই। কোথাও মিললেও দিতে হচ্ছে বাড়তি দাম। এরমধ্যেই গত ৮ মে চট্টগ্রামে একটি মার্কেটের দোকানের মেঝের নীচ থেকে ১ হাজার লিটার তেল উদ্ধার করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সুড়ঙ্গ থেকে তেল বের করার ছবি মুহূর্তে ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কারণ তেলের মতো এই নিত্যপণ্যটি এভাবে লুকিয়ে রাখার ঘটনা হয়তো অতীতে কখনো ঘটেনি।

এত গেল চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকার কর্ণফুলী কমপ্লেক্সের একটি দোকানের চিত্র। চট্টগ্রামেরই আরেক ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াছ হোসেন গত মার্চে ১৩০ টাকা দরে খোলা পাম তেল কিনেছিলেন। আর খোলা সয়াবিন কেনেন ১৩৬ টাকা লিটারে। এতদিন ৬ হাজার ৪০০ লিটার তেল বিক্রি না করে লুকিয়ে রেখেছিলেন গুদাম, দোকান ও রাস্তার একপাশে। 

অবশ্য তেলকে ‘গুপ্তধনের’ মতো করে এভাবে লুকিয়ে রেখেও রেহাই পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। অধিক লাভের আসায় দুই মাস আগের কেনা তেল বিক্রি না করায় রবিবার চট্টগ্রামের এই ব্যবসায়ীকে র‍্যাব ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের যৌথ অভিযানে ধরা পরে। এসময় তাকে জরিমানা গুনতে হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার।

র‌্যাবের দাবি, তিনি বেশি লাভের আশায় এসব তেল মজুদ করেছিলেন। এখন দাম বেড়ে যাওয়ার পর কম দামে কেনা তেল বেশি দামে বিক্রি করা শুরু করেন।

তেল নিয়ে এমন নানা ঘটনা ঘটছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। পণ্যটির দাম বাড়ার গুঞ্জনের মধ্যেই রমজানের শেষ দিক থেকে অধিক মুনাফার আশায় তেল মজুত করতে থাকেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। কোম্পানি থেকে তেল সরবারহ বন্ধের দোহাই দিয়ে বাজার তেলশূন্য করলেও এখন প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযানে উদ্ধার হচ্ছে হাজার হাজার লিটার তেল। 

অভিযানে অংশ নেয়া কর্মকর্তারা বলছেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা এমনভাবে তেল সরিয়ে রাখছেন তথ্য না পেলে সেখান থেকে কোনোভাব তেল উদ্ধার করা সম্ভব না। 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার ঢাকা মেইলকে বলেন, ব্যবসায়ীরা দোকান খালি রেখে অন্যত্র তেল সরিয়ে রাখছে। তথ্য না পেলে কোনোভাবে এসব জায়গা চেনার সুযোগ নেই। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি যাতে অবৈধভাবে মজুদ করা তেল উদ্ধার করে বাজার স্বাভাবিক করার।’ 

ঈদুল আজহার পরে হঠাৎ করে তেলের দাম লিটারপ্রতি ৩৮টাকা বাড়ানোর পর থেকে বাজারে আবারও শুরু হয় অস্থিরতা। লিটারপ্রতি ১৯৮ টাকা হলেও বাজারে তেলের দেখা পাওয়া যায়নি বেশ কিছুদিন। যারাও পেয়েছেন তাদের কিনতে হয়েছে নির্ধারিত দামের চেয়ে কমপক্ষে ২০ টাকা বেশি দিয়ে।

তবে অভিযানে যে তেল উদ্ধার করা হচ্ছে তা আগের কেনা দামে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। মানুষের তেলের কষ্ট দূর করতে কোথাও আবার দ্রুত সময়ে বিক্রি করে দেয়ার আলটিমেটাম দেয়া হচ্ছে। 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ মে দেশের ২৪ জেলায় অভিযানে ১ হাজার ৮০হাজার ৯৬৯লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। এরপরের দিন সংস্থাটির ৫৭টি টিম ১১৪টি প্রতিষ্ঠানকে তেল মজুতের অভিযোগে ১৮ লাখ ২হাজার ৫০০টাকা জরিমানা করে। এসময় উদ্ধার করা হয় ২ লাখ ৬ হাজার ৬৬৬লিটার তেল। 

গত কয়েকদিনের তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে অবৈধ মজুদ করা প্রায় ৭ লাখ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। যা ৫ লিটার বোতলের ১ লাখ ৪০ হাজার বোতলের পরিমাণ। অথচ বেশ কিছুদিন ধরে দেশের কোনো বাজারে সয়াবিন তেলের দেখা মেলেনি। হঠাৎ তেল উধাও হওয়ায় সাধারণ মানুষকে বিপাকে পড়তে হয়।

এদিকে তেলের বাজার খালি করা এবং হঠাৎ করেই নিজেদের দাম বাড়িয়ে দেয়ার ঘটনা নিয়ে ব্যবসায়ীদের একহাত নিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী। সচিবালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ঈদের পরে দাম সমন্বয় করা হবে এমন কথা বলা হলেও ব্যবসায়ীরা কথা রাখেননি। তারা দোকান থেকে তেল সরিয়ে নিজেদের মতো দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। 

ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করে সরকার ঠকেছে বলেও মন্তব্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

এদিকে দেশের বাজারে যখন তেল সংকট তখন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, গত ১০ মাসে সয়াবিন তেলটি রফতানি হয়েছে ৮৬ লাখ লিটার। আর পাম তেল রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৬৩ লাখ লিটার। এ থেকে রফতানি আয় হয়েছে প্রায় ২০৭ কোটি টাকা। গতবছরের শেষ দিকেই ভোজ্যতেলের বড় অংশ রফতানি হয়েছে। আর এ বছরের প্রথম ৪ মাসে রফতানি হয়েছে ১৫ লাখ লিটার সয়াবিন ও পাম তেল।

দেশ থেকে পাম ও সয়াবিন তেল রফতানিকারকের তালিকায় আছে টিকে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ও দেশবন্ধু গ্রুপের এসজি অয়েল রিফাইনারি। যদিও তেল রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এবছর রফতানি করেনি বলে দাবি করেছে।

বিইউ/ একেবি