নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ মে ২০২৪, ০৭:৫২ পিএম
বাংলাদেশ ব্যাংকের বারবার নীতি পরবর্তনের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম।
তিনি বলেন, বারবার এই ধরনের পলিসি নীতি পরিবর্তনের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একটা প্রজেক্ট করার সময় সুদের হার, বিনিময় হারসহ নানাবিধ চিন্তা-ভাবনা করে তারপর কাজ শুরু করি। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুদিন পরই যদি নীতিতে পরিবর্তন আনে, তখন আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। অবশ্যই বারবার নীতি পরিবর্তন হলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। এজন্য আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুরোধ করেছি যাতে নীতিগুলো বারবার পরিবর্তন না করে। যাতে নীতিগুলো দীর্ঘমেয়াদি হয়। এতে আমরা আমাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করতে সহজ হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনর এ বিষয়ে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সাথে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের বৈঠক শেষে সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমরা অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেছিলাম। ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে কথা হয়েছে। সুদের হার, ডলারের রেট নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা যেটা মনে করি ডলারের যে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে আমরা বলেছি সেটা যেন ১১৭ টাকাই থাকে। তিনি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে ১১৭ টাকা ১ টাকা কম অথবা বেশি হবে এর বাইরে যাবে না। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ডলারের সব সমস্যা পুরোপুরি সেরে উঠবে। এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডলারের সমস্যা আছে। ডিসেম্বরে আর সমস্যা থাকবে না।
মাহবুবুল আলম বলেন, ডলারের দাম একসাথে ৭ টাকার বাড়ার কারণে যে পরিমাণ ঋণ বেড়েছে সে পরিমাণ টাকার দীর্ঘমেয়াদী ঋণের আবেদন করেছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ ডলারের দাম বাড়ার কারণে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাছাড়া যাদের ঋণে একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রম করেছে। তাদের জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন গভর্নর। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ডলার মার্কেট স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলেও জানিয়েছে তিনি।
তিনি বলেন, সুদের হারের বিষয়ে গভর্নর আমাদেরকে বলেছেন, আমরা এটা সম্পূর্ণ মার্কেটের উপর ছেড়ে দিয়েছি। বিভিন্ন ব্যাংকের কস্ট ৬ থেকে ৮ শতাংশ। তাই সুদ কোনোভাবেই ১৪ শতাংশের ওপরে যাওয়া উচিৎ না। এছাড়াও ডলার এক্সচেঞ্জ রেটের কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গ্রুপের যে লস হয়েছে এই টাকাটা ব্যাংকের কাছে হিসাব আছে। লং টার্ম একটা লোন দিয়ে তাদের যেন সমাধান করা যায়। সেটা আমরা বলেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো নীতি পরিবর্তন করার সময় স্টেক হোল্ডারদের সাথে পরামর্শ করেননি। আমরা মনে করি কোনো নীতি করার সময় যদি আমাদের সাথে কথা বলা হয় তাহলে সেটা ভালো হয়।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছি না। এদিকে ইডিএফ কমিয়ে তিন বিলিয়নে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এই সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিকল্প একটি তহবিল ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া এখন ব্যবসায়ীরা ১১৭ টাকায় এলসি খুলতে পারছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যদি কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বেশি টাকা নেওয়া হয় তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তিনি আরও বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কিছু কিছু গ্রাহকের একক গ্রহণ সীমা অতিক্রম করেছে। বিষয়টি সমাধানে ব্যাংক এবং গ্রাহক ভিত্তিক বিশেষ সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন গভর্নর। ফান্ডেড এবং নন ফান্ডেড মিলে ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ একজন গ্রাহক না পাওয়ার শর্ত থাকলেও এই পরিস্থিতিতে তাদের জন্য বিশেষ বিবেচনা করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৮ মে ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারণ পদ্ধতি সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ রেট (স্মার্ট) প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে। ঋণের সুদহার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করার জন্য ছয় মাসের ট্রেজারি বিলের গড় সুদভিত্তিক ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু এখন এই নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পিছু হটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ধারণা করা হচ্ছে আইএমএফ-র কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে গতকাল (বুধবার) এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, যেসব গ্রাহকের নির্ধারিত একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রম করেছিল, তাদের ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণ নির্ধারিত সীমার মধ্যে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এরপরও কিছু গ্রাহক একক গ্রাহক ঋণের ঊর্ধ্বসীমা শিথিল করার জন্য আবেদন করছেন, যা নির্দেশনার পরিপন্থী। এমন প্রেক্ষাপটে বৃহৎ ঋণঝুঁকি হ্রাস, করপোরেট সুশাসন সমুন্নত রাখা এবং ঋণ বিতরণে উত্তম চর্চা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য একক গ্রাহক ঋণ সীমা কোনোক্রমেই অতিক্রম না করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আজ ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠকে সেই নির্দেশনা যথাযথ বাস্তবায়ন করবেন না বলে জানিয়েছে গভর্নর।
টিএই/এএস