images

অর্থনীতি

টাকার বড় অবমূল্যায়ন, ডলারের দাম একদিনেই কেন ৭ টাকা বাড়ল?

ঢাকা মেইল ডেস্ক

০৮ মে ২০২৪, ১০:২৮ পিএম

বাজারে চা‌হিদার তুলনায় সরবরাহ কম ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের কারণে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে ব্যাংকগুলোকে ১১৭ টাকায় মার্কিন ডলার ক্রয়-বিক্রয় করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরণের অবমূল্যায়ন হলো। এর আগে প্রায় ১১০ টাকা দরে ডলার কেনাবেচা হচ্ছিল।

বুধবার ব্যাংকগুলোকে এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকরের কথা জানিয়ে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এতে বলা হয়, মার্কিন ডলারের ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রলিং পেগ এক্সচেঞ্জ রেট পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ পদ্ধতিতে প্রতি মার্কিন ডলারের দাম ক্রলিং পেগ মিড রেট (সিপিএমআর) নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা।

গত বছরের শেষ দিক থেকেই আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা আইএমএফ ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে এ পদ্ধতি চালু করার পরামর্শ দিয়ে আসছিল। সংস্থাটির সাথে বাংলাদেশ যে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করেছিল তার আওতায় এখন তৃতীয় দফা ঋণ ছাড়ের জন্য আলোচনা চলছে।

dollar

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন সময় এ সিদ্ধান্ত প্রকাশ করলো যখন আইএমএফ এর একটি দল ঢাকায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে।

অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর পর শুরুতে বড় উল্লম্ফন অস্বাভাবিক বিষয় নয়। তবে অন্য সব কিছু ঠিক থাকলে দীর্ঘমেয়াদে ডলারের বাজারে স্থিতাবস্থা আনতে এটি সহায়ক হবে। যদিও এটি নিশ্চিত করতে হলে হুন্ডি কিংবা ডলারের এ ধরনের বাজার বহির্ভূত যে লেনদেন সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

ক্রলিং পেগ পদ্ধতি কী এবং এর পরে কী হবে

‘ক্রলিং পেগ’ হচ্ছে দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি মুদ্রার বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেওয়া হয়।

এক্ষেত্রে মুদ্রার দরের একটি সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করা থাকে। ফলে একবারেই খুব বেশি বাড়তে বা কমতেও পারবে না।

তবে নতুন এ পদ্ধতিতে ‘ক্রলিং পেগ মিড রেট’ বা ‘সিপিএমআর’ ১১৭ টাকায় নির্ধারণ করার কারণে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছে এবং আন্তঃব্যাংক চুক্তির ক্ষেত্রে সিপিএমআরের কাছাকাছি দামে মার্কিন ডলার ক্রয় বা বিক্রয় করতে পারবে।

এই ১১৭ টাকা মূলত ডলারের বিপরীতে টাকার একটি মধ্যবর্তী হার। ব্যাংকগুলো এর চেয়ে কম-বেশি দাম নিতে পারবে তবে সেটি খুব বেশি পার্থক্য করা যাবে না। ব্যাংকগুলোকে প্রতিদিন ডলার কেনাবেচার দামের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে।

বাংলাদেশ প্রায় দুবছরেরও বেশি সময় ধরে ডলার সংকট চলছে। ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছে আগেই। যদিও খোলা বাজারে লেনদেন হচ্ছিল আরও বেশি দামে।

ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও। ২০২১ সালের অগাস্টে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার, সংকটের কারণে সেটি এখন বিশ বিলিয়ন ডলারেরও নিচে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও বাজারে সংকট কাটেনি।

dollar1

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখনই ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি ব্যবহারের চিন্তার কথা জানিয়েছিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন উপায়ে ডলারের বাজার ব্যবস্থাপনার যে চেষ্টা কেন্দ্রীয় ব্যাংক করেছিল তা সংকট নিরসনে খুব একটা ভূমিকা রাখেনি।

বরং বৈধ চ্যানেলের বাইরে বিভিন্ন পন্থায় ডলার আসার পাশাপাশি দেশ থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল বলে মনে করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন, এখন ক্রলিং পেগ কতটা প্রভাব ফেলবে তার ওপর নির্ভর করবে যে ডলার ব্যবহারকারীরা কতটা আত্মবিশ্বাস পান। হুট করে কোনো বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দিয়ে বাজারকে স্বাধীনভাবে চলতে দিতে হবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

/এএস