images

অর্থনীতি

ব্যাংক একীভূত হওয়া নিয়ে ‘হ-য-ব-র-ল’

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন

২২ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৬ পিএম

* কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে স্বেচ্ছায় মার্জার
* মার্জারের বিপক্ষে কর্মীদের অবস্থান
* আতঙ্কে আমানত তুলছে আমানতকারী
* ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আতঙ্কে
* দায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই নিতে হবে: বিশেষজ্ঞ

অনিয়ম, খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকট সুশাসনের অভাবসহ দীর্ঘদিন ধরেই নানামুখী সংকটে দেশের ব্যাংকিং খাত। চলছে ডলার সংকট। টান পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। সম্প্রতি ব্যাংকের শৃঙ্খলা ফেরাতে দুর্বল ব্যাংকের সাথে সবল ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু এই প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখা দিয়েছে ব্যাংক খাতে। দুর্বলের সঙ্গে সবল এবং বেসরকারির সঙ্গে সরকারি ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে পুরো ব্যাংক খাতে একধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ব্যাংকে টাকা রাখা-না-রাখা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন বেশির ভাগ আমানতকারী। এজন্য ভয়ে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। ব্যাংক একীভূত নিয়ে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যেই ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমানতকারীদের আতঙ্ক দূর করতে না পারলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। সার্বিক পরিস্থিতির দায় বাংলাদেশ ব্যাংককেই নিতে হবে।

গেল ১৮ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের উপস্থিতিতে ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে প্রচলিত নিয়মে পরিচালিত পদ্মা ব্যাংক সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে প্রথম একীভূত প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে ৩ এপ্রিল সরকারি খাতের দুটি ব্যাংককে অন্য দুটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। জানানো হয়, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) এবং সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে মিলবে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)। এরপর ৮ এপ্রিল বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি খাতের সমস্যাগ্রস্ত বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। আর সর্বশেষ ৯ এপ্রিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক বা ইউসিবির সঙ্গে সংকটে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত আসে।

এছাড়াও গেল ৪ এপ্রিল ব্যাংক একীভূতকরণের নীতিমালা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নীতিমালায় বলা হয়, কোনো ব্যাংক স্বেচ্ছায় একীভূত হতে চাইলে নিজ নিজ পরিচালনা পর্ষদে সিদ্ধান্ত নেবে। একীভূত হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ৩ বছর পর্যন্ত পৃথক আর্থিক বিবরণী প্রণয়ন করতে পারবে। এতে অধিগ্রহণকারী ব্যাংকের আর্থিক বিবরণীতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তবে ৩ বছর পর অবশ্যই একীভূত হওয়া দুই ব্যাংকের সমন্বিত আর্থিক বিবরণী প্রণয়ন শুরু করতে হবে। এছাড়াও, দুর্বল ব্যাংককে ২০২৫ সাল থেকে বাধ্যতামূলক একীভূত করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো ব্যাংক একীভূত হওয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে। এ কাজের খরচ জোগান দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দায় ও সম্পদ গ্রহণের দরপত্র পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করতে হবে, যাতে ওই ব্যাংকের সব ধরনের তথ্য থাকবে। এতে সাড়া না মিললে যে কোনো ব্যাংকের সঙ্গে ওই ব্যাংককে একীভূত করে দিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নীতিমালার আরও বলা হয়, একীভূত হওয়া দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) চাকরি হারাবেন। এ ছাড়া একীভূত হওয়া দুই ব্যাংকের মধ্যে খারাপ অবস্থায় থাকা ব্যাংকের পরিচালক আগামী ৫ বছর অন্য কোনো ব্যাংকে পরিচালক হতে পারবেন না। নীতিমালার আলোকে, খারাপ অবস্থায় থাকা ব্যাংকগুলো নিজ থেকে একীভূত না হলে বাধ্যতামূলকভাবে একীভূতকরণ করা হবে। একীভূতকরণের আগে দুই ব্যাংকের মধ্যে একটি সমঝোতা সই করতে হবে। এরপর বিস্তারিত পরিকল্পনা বিশেষ করে আমানতকারী, সকল পাওনাদার ও বিনিয়োগকারীর অর্থ ফেরতের পরিকল্পনা জমা দিতে হবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক বহিঃনিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক চিত্র বের করবে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে সর্বশেষ আদালতের কাছে একীভূতকরণের আবেদন করতে হবে।

এদিকে সিটি ব্যাংকের সাথে মার্জারের ঘোষণার পর থেকেই আপত্তি তুলেন বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের দাবি বেসরকারি ব্যাংকের সাথে নয়, সরকারি কোনো ব্যাংকের সাথে একীভূত হতে চান তারা। তাই সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার দাবিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন বাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একই দাবিতে অর্থমন্ত্রণালয়েও স্মারকলিপি দেন তারা। এরই মধ্যে ‘বেসিক ব্যাংক সরকারের কোনো ব্যাংক অর্ডারের দ্বারা স্থাপিত ব্যাংক নয়’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন মন্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে বেসিক ব্যাংকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক এ কথা বলার পরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। নিজেদেরকে শতভাগ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দাবি করে বেসিক ব্যাংক বলছে, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এরূপ বক্তব্য বেসিক ব্যাংকের বিষয়ে জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে এবং ব্যাংকের গ্রাহকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) একীভূতকরণ প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে রাজশাহীতে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। আবার বিডিবিএল-সোনালী ব্যাংকের একীভূত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি দিয়েছে বিডিবিএল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মার্জার ইফেক্ট’ ব্যাংক পাড়া ও দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে। ব্যাংকের আমানতকারী ও গ্রাহকরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। তারা আমানত তুলে নিচ্ছে। নতুন করে আমানত রাখতে ভয় পাচ্ছে। গ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে বিলম্ব করছে। ব্যাংক কর্মকর্তারাও এক ধরনের অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।

এবিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, স্বেচ্ছায় যারা এখন পর্যন্ত দুর্বল ৫টি ব্যাংক অন্য পাঁচ ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদেরকে নিয়ে কাজ করা হবে। এটা একটা লং টার্ম প্রসেস। এটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হতে বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া অতিক্রম হতে পারে। বেশ কিছু পদক্ষেপের পর চূড়ান্তের বিষয় আছে। এখানে আইনগত বিষয় আছে, অডিটের বিষয় আছে। মার্জারের বিষয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হবে আদালতে। এসব প্রক্রিয়া শেষ না হাওয়া পর্যন্ত ব্যাংকগুলো স্বাভাবিক নিয়মেই চলবে। মার্জারের আলোচনা বা প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় কোনো দুর্বল ব্যাংক যদি সবল হয় সে যদি চায় তারা মার্জারে যাবে না তবে চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত মার্জারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারবে। কোনো কারণে ব্যাংক যদি একীভূত না হয় তবে সেই ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে। প্রথমে এই পাঁচ ব্যাংক মার্জারের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে আমরা (বাংলাদেশ ব্যাংক) অভিজ্ঞতা নেব। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অপরদিকে ব্যাংকে টাকা রাখা-না-রাখা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন আমানতকারীরা। এজন্য আতঙ্কে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। এ তালিকায় কিছু প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীও রয়েছে। শরিয়াহভিত্তিক একটি বেসরকারি ব্যাংকে কয়েকদিনে আমানত ফেরতের ১২টি আবেদন জমা পড়েছে। প্রতিটিই বড় অঙ্কের এফডিআর। ইতোমধ্যে বেসিক ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত হারিয়েছে। বিডিবিএল থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। একীভূতের তালিকায় থাকা অন্যান্য ব্যাংকের পরিস্থিতিও প্রায় একই। তারা আমানত হারানোর আশঙ্কায়।

এ বিষয়ে বেসিক ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু মো. মোফাজ্জাল বলেন, ২০১৫ সাল থেকে সোনালী, জনতার মতো বেসিকও রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক। এ কারণে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা বেসিক ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছে। বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার খবরে তারা টাকা তুলে নিতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত তুলে নিয়ে গেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কারণ তাদের ধারণা, বেসিক ব্যাংক বেসরকারি হয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্জারে যাওয়া আরেক ব্যাংকের এমডি বলেন, হঠাৎ করে টাকা তোলার তাড়াহুড়ো ব্যাংকটিকে প্রচণ্ড চাপে ফেলেছে। আমরা বিভিন্ন শাখায় গিয়ে আমানতকারীদের সঙ্গে কথা বলছি এবং টাকা উত্তোলন না করতে অনুরোধ করছি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকগুলোতে যে পরিস্থিত তৈরি হয়েছে তার দায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই নিতে হবে। আমানতকারীদের মধ্যে যে আতঙ্ক তা দূর করতে সরকারকেই কাজ করতে হবে।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ঢাকা মেইলকে বলেন, মার্জারের কারণে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে অনেকেই না বুঝে আমানত তুলে নিচ্ছে। সবল ব্যাংক থেকে হয়তো টাকা তুলে নেওয়ার তেমন কারণ নাই। তবে দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা তুলবে এটাই স্বাভাবিক। মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক তা দূর করা কঠিন কিছু নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি চায় সেটা দূর করতে পারে। এটা মানুষকে সরকারের বুঝানো উচিত। এই আতঙ্ক দূর করতে হবে। সরকার একটা বিজ্ঞপ্তি দিতে পারে ডিপোজিটরদের আমানত সরকারিভাবে সুরক্ষা দিতে হবে। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা অস্পষ্টতা আছে। তারা বলে নাই যে আমানতকারীদের রক্ষা করবে। এর দায়ভারও বাংলাদেশ ব্যাংককে নিতে হবে। এখন সরকার সেই পর্যায়ে যেতে চাচ্ছে না। সে জন্যই এই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। আর খেলাপীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর কারণে সবল ব্যাংকগুলোতো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হবেই। দুর্বলকে তাদের ধ্বসগুলো উঠাতে গেলে ৫, ৭, ১০ বছর লেগেও যেতে পারে। এজন্য সরকারের সাপোর্ট লাগবে।

বাংলাদেশ মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, অনেক দেশে মার্জার হয়েছে এবং সেগুলোতে মার্জারের বিভিন্ন ধরনের মডেল আছে। কিন্তু বাংলাদেশে কি মডেলে মার্জার হবে তা এখনও অস্পষ্ট। এখানে একটা বিষয় আছে, যে পলিসি আপনি ঘোষণা করছেন সেটার বিশ্বাসযোগ্যতা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আজকে এটা কালকে আরেকটা পরশু আরেকটা এই ধরনের একটা অনিশ্চয়তার পরিবেশ, ধোঁয়াটে পরিবেশ তৈরি হলে কোনো মডেলই কাজ করবে না। ব্যাংকে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এর দায় ব্যাংকগুলোর অভিভাবক কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই নিতে হবে। এসব নিয়ে যত ঘোষণা, সার্কুলার সব তো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই আসছে। ডিপজিটরদের নিরাপত্তার বিষয়টা সবার আগে দেখতে দেখতে হবে।

টিএই/এএস