মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৪৪ পিএম
#১২ ব্যাংক থেকে টাকা-ডলার অদল-বদল
#কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাউকে জোর-জবরদস্তি করছে না: মুখপাত্র
# রিজার্ভ বেড়ে ২০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার
বাণিজ্যিক ব্যাংগুলোর সঙ্গে টাকার ও ডলার অদলবদলের (সোয়াপ) মাধ্যমে ডলার সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি চালুর পর ১২ ব্যাংক থেকে সোয়াপ পদ্ধতিতে টাকা দিয়ে ৫৮৮ মিলিয়ন (৫৮ কোটি ৮০ লাখ) ডলার ক্রয় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর রেট ধরা হয়েছে প্রতি ডলার ১১০ টাকা। নতুন এ ব্যবস্থায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সর্বনিম্ন ৫ মিলিয়ন বা ৫০ লাখ ডলার লেনদেন করতে পারবে। আর সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য টাকা-ডলার অদলবদল করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কেনায় রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।
সোয়াপ (Swap) মানে হচ্ছে বিনিময় করা বা অদলবদল করা। ফিন্যান্সের ভাষায়, সোয়াপ বলতে বুঝায় একটি নির্দিষ্ট সময় পর দুইটি সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে কোনো একটি আর্থিক হাতিয়ারের পরিবর্তে অন্য আরেকটি আর্থিক হাতিয়ারের বিনিময়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ডলার সংকট সামলাতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় সহজ করতে সোয়াপ চালু করা হয়েছে। এতে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো জোরজবরদস্তি করছে না। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সোয়াপ চালুর পরেই ১২টি ব্যাংক থেকে টাকার বদলে ৫৮৮ মিলিয়ন ডলার নেওয়া হয়েছে, যা রিজার্ভের জন্য ইতিবাচক বলা যায়। এছাড়া ব্যাংকগুলোর ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি নজরে থাকছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ৩০ দিন মেয়াদী এসব টাকা-ডলার অদলবদলের সোয়াপ হয়েছে। ৩০ দিন শেষ হলেই ব্যাংকগুলো টাকা দিয়ে ডলার নিয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা জমা রেখে কোনো ব্যাংক এখনো ডলার নেয়নি। মূলত যাদের রেমিট্যান্স বেশি আসছে, তারাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সোয়াপ করতেছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ১১০ টাকা দরে ব্যাংকগুলো প্রবাসী ও রফতানি আয় কিনছে। এই দামে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার অদলবদল করেছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার নিয়ে সমপরিমাণ টাকা দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে।
ব্যাংকগুলো ডলার জমা দিয়ে টাকা ধার নেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। ২০ ফেব্রুয়ারি বেড়ে হয় ২০ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। গত সোমবার দিন শেষে রিজার্ভ আরও বেড়ে ২০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসেবে ওই দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।
জানা গেছে, ডলারের বেলায় সুদহার নির্ধারিত হবে সোফ (সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট) এর ৯০ দিনের সুদহার অনুযায়ী। এ সুদহার প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউকে ফাইন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথোরিটির (এফসিএ) অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান সিএমই গ্রুপ।
সিএমই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সিএমইর তিন মাসের সুদহার ছিল ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর টাকার বেলায় সুদহার নির্ধারণ করা হবে ব্যাংক রেট অনুযায়ী। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে সুদ হারে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়, তাকে বলে ব্যাংক রেট। শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের জন্য মুনাফার হার ঠিক হবে শরিয়া অনুযায়ী।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে উদ্বৃত্ত ডলার থাকলে এখন তা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে তারা সমপরিমাণ টাকা ধার নিতে পারবে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক উভয় পক্ষই লাভবান হবে। কারণ, উদ্বৃত্ত ডলারের বিপরীতে ব্যাংকগুলো তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পেয়ে যাবে। আবার নির্ধারিত সময় পর টাকা ফেরত দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ ডলার নিতে পারবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি সার্কুলার জারি করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, স্থানীয় মুদ্রাবাজার গতিশীল করতে কারেন্সি সোয়াপ পদ্ধতি চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে ডলার বা যেকোনো স্বীকৃত বৈদেশিক মুদ্রা জমা রেখে টাকা নেওয়া যাবে। আবার টাকা জমা রেখে ডলার বা অন্য স্বীকৃত মুদ্রা নেওয়া যাবে। সোয়াপের ক্ষেত্রে ওই দিনের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারভিত্তিক দর হিসাব করা হবে। শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর সোয়াপে কোনো সুদ আরোপ হবে না। তবে প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ক্ষেত্রে টাকার নীতি সুদহার রেপো এবং ডলারের বেঞ্চমার্ক রেট সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেটের (এসওএফআর) মধ্যে যে পার্থক্য থাকবে সে পরিমাণ সুদ পাবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, সোয়াপের সাধারণ মেয়াদ হবে ৭ থেকে ৯০ দিন। তবে ব্যাংক চাইলে রোলওভার করতে পারবে। আর যে মুদ্রায় অর্থ নেওয়া হবে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে আবার সেই মুদ্রায়ই অর্থ ফেরত দিতে হবে। সোয়াপের দিন যে বিনিময় হার হবে সেটি ধরেই মেয়াদপূর্তির তারিখে অর্থ ফেরত পাবে ব্যাংক।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডলারের জন্য কাউকে চাপ দেওয়া যাবে না। নীতি অনুযায়ী সোয়াপ বাস্তবায়ন করতে হবে।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সোয়াপের ক্ষেত্রে হয়তো ব্যাংকগুলো স্বেচ্ছায় দিতে পারে কিংবা চাপের মুখেও দিতে পারে, এটা বলা মুশকিল। এটার একটা কন্টিনিওয়াজ ইমপ্যাক্ট আছে। তবে নীতিটা হচ্ছে স্বেচ্ছায় দেওয়া এবং স্বেচ্ছায় নেওয়া উচিত।’
টিএই/এমএইচটি