images

অর্থনীতি

সংকটেও পরিচালন মুনাফা বেড়েছে অনেক ব্যাংকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২২ পিএম

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই সংকটের মধ্যেও দেশের অনেক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। ২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসে তুলনামূলক ব্যাংক ব্যবসা বেড়েছে বলে মত ব্যাংকারদের। তাই সার্বিকভাবে হিসাব করলে দেখা যায়, ১২ মাসে মুনাফা বেড়েছে বেশিরভাগ ব্যাংকের। দেশের ব্যাংকগুলোর আয়ের বড় একটি অংশ আসে বৈদেশিক বাণিজ্য থেকে।

২০২৩ সালের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) দেশের প্রায় সব ব্যাংকেরই মুনাফার এ উৎস সংকুচিত হয়েছিল। তাছাড়া তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোর তহবিল সংগ্রহ ব্যয় (কস্ট অব ফান্ড) আগের তুলনায় বেড়ে যায়। ফলে আগের ছয় মাসে কমলেও জুলাই থেকে ডিসেম্বরে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।

তবে পরিচালন মুনাফাই একটি ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে যা থাকে, তা-ই হচ্ছে পরিচালন মুনাফা। আর পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ, সঞ্চিতি, করপোরেট কর বাদ দিলে যা থাকে, তা-ই হচ্ছে নিট মুনাফা। নিট মুনাফা থেকেই লভ্যাংশ দেয় তালিকাভুক্ত ব্যাংক। শুধু পরিচালন মুনাফা দেখে বিনিয়োগ না করতে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের প্রতি গত বছর আহ্বান জানিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে রাষ্ট্রায়ত্ব রূপালী ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৬০ শতাংশ। কারণ ২০২৩ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। কিন্তু এক বছর আগে (২০২২) তা ছিল ১০৬ কোটি। ঋণ আদায় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এক বছরের ব্যবধানে ৫৯৪ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা বেড়েছে রূপালীর। সদ্য সমাপ্ত বছরে রাষ্ট্রায়ত্বা জনতা ব্যাংকের মুনাফা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৩ কোটি টাকা। তবে আগের বছর ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৯২৮ কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১৩৫ কোটি টাকা। কারণ ২০২২ সালে ব্যাংকটির মোট পরিচালন মুনাফা ছিল দুই হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। তবে এবছর ২০২৩ সালে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৮১ কোটি টাকায়। ২০২৩ সালে ৪৫৫ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে ইউনিয়ন ব্যাংক। আগের বছর ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছিল ৪১৫ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের লাভ হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু এক বছর আগে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৫২০ কোটি টাকা। একই সমেয় মেঘনা ব্যাংকের পরিচালর মুনাফা ৭৫ কোটি থেকে ১৬৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

এসব বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সব ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে বিষয়টা এরকম নয়। কেননা ২০২১ সালে দেশে করোনার ভয়াবহতা বিরাজ করেছে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সহায়তায় বেশকিছু ছাড় দিয়েছে। ২০১৯ সালে পরিশোধ না করলেও কোন ঋণই খেলাপী করা হয়নি। ২০২০ সালে ২৫ শতাংশ পরিশোধে খেলাপী না করার নির্দেশ দেয়া হয়। এসব ছাড়ের ফলে অধিকাংশ ব্যাংকই প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করেনি। এখন সেই সুবিধা না থাকলেও গত কয়েকবছরে অনেক খেলাপি ঋণ বিশেষ সুবিধায় নিয়মিত করা হয়েছে। যার কারণে প্রভিশন রাখতে হয়নি।

তিনি আরও বলেন, এবছর ঋণের সর্বোচ্চ সীমা উঠিয়ি দিয়েছে বাংলাদেশে ব্যাংক। বৈদেশিক মু্দ্রার সংকটের মধ্যেও যাদের হাতে ডলার ছিল তারা ভালোই ব্যবসা করেছে। তাই ওইসব ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। তবে যারা ডলার সংকটে তার খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। কারণ তারা এখনো অন্য ব্যাংকের কাছে ডলারের জন্য অনুরোধ করছে।

টিএই/জেবি