images

অর্থনীতি

মনিটরিংয়েও কমছে না ডাবের দাম

খলিলুর রহমান

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৩৫ পিএম

ডাবের পানি যেমন সুস্বাদু তেমনি মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। মুহূর্তেই দুর্বলতা কাটাতে এর জুড়ি মেলা ভার। যেকোনো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাই হরহামেশাই ডাবের পানি পান করে থাকেন।

সম্প্রতি এডিস মশাবাহী রোগ ডেঙ্গুর প্রভাবে রাজধানীতে ডাবের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। এই সুযোগেই অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ঢাকার অলিগলিতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ডাব। মাঝে কিছুদিন অসাধু ব্যবসায়ীদের রুখতে অভিযানও চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। তবে বাজার তদারকির পরও যেন কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না ডাবের দাম।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ডেঙ্গুর সুযোগ নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা তাদের থেকে কম দামে ডাব কিনে অতিরিক্ত লাভে বিক্রি করছে। অন্যদিকে উল্টো অভিযোগ খুচরা ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন- ডেঙ্গুর ভয়াবহতার সুযোগে পাইকারি ব্যবসায়ীরাই ডাবের দাম বাড়াচ্ছেন।

খুচরা কিংবা পাইকারি কোনোক্ষেত্রে অতিরিক্ত লাভে ডাব বিক্রির অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ভোক্তা অধিদফতর। ছবি: ঢাকা মেইল

তবে ভোক্তা অধিদফতর থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, খুচরা কিংবা পাইকারি উভয় পর্যায়ে কোথাও অতিরিক্ত লাভে ডাব বিক্রির অভিযোগ পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। এরপরও কমছে না দাম।

শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বিক্রেতারা সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে প্রতিটি ডাব বিক্রি করছেন। তুলনামূলক ছোট আকারের ডাবও সর্বনিম্ন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যদিও বাজার ঘুরে মাত্র দুটি আড়তে মূল্যতালিকা সাঁটানো থাকতে দেখা গেছে। তবে বেশিরভাগ আড়তেই মৌখিকভাবে দরদাম করে ডাব ক্রয়-বিক্রয় করতে দেখা গেছে।

ডাবের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগের পর গত ২৪ আগস্ট গভীর রাতে কারওয়ান বাজারের আড়তে অভিযান চালয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এছাড়াও গত সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) কারওয়ান বাজারে সংস্থাটির মূল কার্যালয়ের সভাকক্ষে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ব্যবসায়ীদের ডাব কেনাবেচায় পাকা রশিদ রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কোনোভাবে ন্যায্যমূল্যের বেশি দামে ডাব বিক্রি করলে জরিমানাসহ কঠোর শাস্তির আওতায় আনার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের।

এছাড়াও সভায় পাইকারি পর্যায়ে ডাবের সর্বোচ্চ মূল্য আকারভেদে ৪০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। আর সবচেয়ে ভালো মানের ডাব খুচরায় সর্বোচ্চ ১০০ টাকার বেশি হতে পারবে না বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে সেই নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই এখনও প্রায় দ্বিগুণ দামে ডাব বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বাজারে ছোট সাইজের ডাবও বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে। ছবি: ঢাকা মেইল

কারওয়ান বাজারের নোয়াখালী বাণিজ্যালয়ে শুক্রবার পাইকারি দরে বড় সাইজের ডাব ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। পাশাপাশি মাঝারি সাইজের ডাব ৮০ থেকে ৮৫ টাকা বা ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরেও বিক্রি করতে দেখা যায়। এছাড়া আড়তটিতে ছোট সাইজের ডাব বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে।

এ বিষয়ে কথা হলে নোয়াখালী বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী আব্দুল খালেক ঢাকা মেইলকে বলেন, বেশি দামে আমাদের ডাব ক্রয় করতে হয়। তাই কম দামে বিক্রি করা যাচ্ছে না। আবার আমরা কম দামে বিক্রি করলেও খুচরা বিক্রেতারা বেশি দামে বিক্রি করছেন।

একই কথা জানিয়েছেন মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবুল হাসান। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ডেঙ্গুর প্রভাবে ডাবের চাহিদা বাড়ছে। তাই বেশি দাম দিয়ে আমাদেরও ডাব ক্রয় করতে হচ্ছে। এ জন্য আমরাও বেশি দামে বিক্রি করছি।

আড়তেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ডাব। ছবি: ঢাকা মেইল

ডাবের এমন দামের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (প্রচার শাখা) মো. শাহ আলমের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে।

এর আগে গত সোমবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ডেঙ্গুর সংক্রমণের সুযোগ নিয়ে হঠাৎ করেই ডাবের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। অসহায় রোগীদের জিম্মি করে ডাব ব্যবসায়ীদের অনৈতিক এই অতিমুনাফা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, ডাব কেনাবেচায় কোনোরকম পাকা ভাউচার কিংবা ক্রয়-বিক্রয় রশিদ রাখা হয় না। এই সুযোগে ডাবের আড়ত, পাইকারি ও খুচরা প্রতিটি স্তরে মূল্যবৃদ্ধির এক মহোৎসব চলছে। আমরা এরইমধ্যে সারাদেশে ডাব নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এর প্রভাব বাজারে পড়েছে।

ডাবের দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ছবি: ঢাকা মেইল 

ক্রয়-বিক্রয়ে রশিদ রাখার নির্দেশনা নিয়ে তিনি বলেন, ডাব ব্যবসায়ীদের অবশ্যই পাকা রশিদ সংগ্রহে রাখতে হবে। তা না হলে অভিযানের মাধ্যমে জরিমানাসহ কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

ডাবের দাম কমানো বিষয়ে সে সময় ভোক্তা অধিদফতরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমি সবাইকে (পাইকারি-খুচরা ব্যবসায়ী) বলছি যতক্ষণে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১০০ টাকার মধ্যে না আসবে আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মনিটরিং জোরদার রাখব।

কেআর/আইএইচ