ওয়াজেদ হীরা
২৭ জুলাই ২০২৩, ১০:২২ এএম
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের যে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি সেই মরিচ রাজধানীর অন্য বাজারে ২০০, ২৫০ বা ২৬০ টাকা ধরে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। গত সপ্তাহে দাম কিছুটা কম থাকলেও দুইদিন ধরে আবার কিছুটা বাড়তি দামেও বিক্রি হচ্ছে। সেই সাথে একেক বাজারে একেক রকম দাম দেখা গেছে।
গত মঙ্গলবার ও বুধবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গত শুক্রবার থেকে রাজধানীর অনেক বাজারেই ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি ধরে কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে দেখা যায়। তবে গত সোমবার (২৪ জুলাই) থেকে অনেক বাজারে ২৫০ টাকার নিচে মরিচ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে রাজধানীর অন্যান্য বাজারে যখন দুইশ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে তখন কারওয়ান বাজারে ডেকে ডেকে ১৫০ আর ১৬০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
কারওয়ান বাজারে পাশাপাশি বসে দুই মরিচ বিক্রেতা কয়েকটি বড় ঝুড়িতে রেখে মরিচ বিক্রি করছিলেন ডেকে ডেকে। তাদের একজন একটু কালচে রঙের মরিচ দেখিয়ে বলেন এই মরিচ কেজি ১৫০ আর পাশের আরেকটি মরিচ দেখিয়ে বলেন এটি ১৬০ টাকা কেজি। কারওয়ান বাজারে খুচরা বিক্রেতারা সর্বোচ্চ ১৭০ টাকা ধরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
কারওয়ান বাজারের জুলহাস নামের এক বিক্রেতা বলেন, গত শুক্রবার ১৬০ করে বিক্রি করেছি এখন পাইকারিতে একটু বেশি তাই কেজিতে ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।
কারওয়ান বাজার থেকে বেরিয়ে পাশেই হাতিরপুল বাজারে খোঁজ নিলে জানা যায়, কাঁচা মরিচের দাম ২৬০ টাকা কেজি। কারওয়ান বাজারে ১৫০ টাকা এখানে ১০০ টাকা বেশি কেন এর কোনো উত্তর মেলেনি কারও কাছে।
রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজার কাঁচা বাজারে মরিচ বিক্রি হচ্ছিল ২৩০ টাকা ধরে। এতো দাম কেন জানতে চাইলে এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে মরিচের দাম একটু বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারে ১৫০ টাকা এখানে এতো বেশি কেন এর জবাবে ওই বিক্রেতা বলেন, তাহলে কারওয়ান বাজার যান। যাইতে আইতে ভাড়া লাগে, খরচ আছে না। বেশি মরিচ কিনলে পচেও যায়। গত সপ্তাহে আমরাও ২০০ টাকা ধরে বেচছি এখন দাম বেশি। কারওয়ান বাজারের সাথে আমাগো মেলানো যাবে না।
রাজধানীর শান্তিনগর কাঁচা বাজরেও মরিচের দাম দুইশ টাকার উপরে। একই বাজারে কেউ ২২০ কেউ ২৪০ টাকা ধরেও বিক্রি করছেন। কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলেন, এই মরিচ টাটকা আজকের। যাদেরটা আগে আনছে একটু পচা ধরছে তারা একটু কমে বেচে দিচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, বাজারে সব ধরনের জিনিসের দামে বেশ নাজেহাল মানুষ। এজন্য একটু কঠোর মনিটরিং সবসময় রাখতে হবে। বাজারে মনিটরিং জোরালো করার কোনো বিকল্প নেই।
কয়েক মাস ধরেই অস্থির দেশের কাঁচা মরিচের বাজার। প্রায় প্রতিদিনই ওঠানামা করছে দাম। আজ দাম কমে তো, কাল আবার বাড়ে। এভাবেই দাম ওঠানামার মধ্য দিয়ে চলছে কাঁচা মরিচের বাজার। তবে দুই দফা দাম কমার পর, বাজারে আবারও বাড়তে শুরু করেছে কাঁচা মরিচের দাম। তবে বেশির ভাগ এলাকায় খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকার মধ্যে। যা তিন চারদিন আগের তুলনায় দাম বেড়েছে ৪০ টাকারও বেশি কেজিতে।
এদিকে বাজারে এসে ক্রেতারাও বেশ বিরক্ত মরিচ নিয়ে। হাতিরপুলে বাজার করে বিক্রেতাকে বেশ কড়া কথা শুনিয়ে দেন এক ক্রেতা। রেগে গিয়ে মেপে দেওয়ার পরও ফেরত দেন মরিচ।
ওই ক্রেতার সাথে কথা বলতে চাইলে ফারুক নাম উল্লেখ করে নিজেকে একজন ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বলেন, আমার স্যানিটারির ব্যবসা আছে বাংলামোটরে। আমি শুক্রবার করে কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করি। ১৪০ টাকা করে গত শুক্রবার মরিচ কিনেছি। এখানে ২৬০ টাকা কেজি চাইল। এটাতো রীতিমতো সবার সামনে ডাকাতি। আমি বিশ টাকা ভাড়া দিয়ে প্রয়োজনে কারওয়ান বাজার যাব। ক্রেতাদের সাথে রীতিমতো এক ধরনের ফাইজলামি এটা। বাজার যেমন খুশি তেমনভাবে চলে। আপনি বলেন, কোন যুক্তিতে ১০ মিনিটের হাঁটা পথের মথ্যে ১০০ টাকার ব্যবধান হবে?
বেশির ভাগ খুচরা বাজারে বিক্রতাদের সাথে কথা বললে এতো দাম কেন সে বিষয়ে অযুহাত দেন পরিবহন খরচ বেশি, বাজারে দাম বাড়ছে এসব। বেশি কথা বাড়ালে সাফ বলে দেন আপনি নিলে নেন নয়তো যেখানে কম সেখানে যান। এতে অনেক ক্রেতা বিরক্ত হয়ে চলে আসেন বা উপায় না দেখে কিনে নেন।
রাজধানীর সড়কে ভ্যানে করে সবজির সাথে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয় আবার কোনো কোনো ভ্যানে শুধু মরিচই বিক্রি করেন। সেখানেও দাম দুইশ টাকার উপরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। শুক্রাবাদ বাজারে ২৪০ টাকা দরে ৫০ টাকার কাঁচা মরিচ কিনেন একজন তরুণ। একটি মেসে থাকেন জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের মেস তাই বাজার এক সপ্তাহেরটা একবারে করি। কারওয়ান বাজার গেলে খরচ কমে অনেক সময় ফার্মগেটেও যাই। তবে স্থানীয় এসব বাজারে সব জিনিসের বেশি দাম রাখে। উপায় নেই তাই আমারও বেকায়দায় পড়ে কিনতে হয়। ৫০ টাকার মরিচ কিনতেতো আর এখন কারওয়ান বাজার যেতে পারি না।
সরবরাহের সংকটের কারণ দেখিয়ে ঈদের কয়েক দিন আগে থেকে দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম হু হু করে বাড়তে শুরু করে। কোরবানির ঈদের আগে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ৩০০ টাকা ছাড়িয়েছে, কোথাও কোথাও ৪০০ টাকায়ও উঠে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৫ জুন থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এরপরও ঈদের পর কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে কোথাও এক হাজার বা ১২শ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। পরে ধীরে ধীরে বাজারে দাম কমতে থাকে। যদিও কাঁচা মরিচের দাম সাধারণত ১০০ টাকার আশেপাশে থাকে সবসময়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংগোনিরোধ উইং থেকে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার ১২৫ মেট্টিক টন কাঁচা মরিচ আমাদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২৪ জুলাই পর্যন্ত আমদানিকারকরা দেশে ২ হাজার ৮৯৩ মেট্টিক টন কাঁচা মরিচ আমদানি করেছেন।
ডব্লিউএইচ/এএস