নিজস্ব প্রতিবেদক
০৯ এপ্রিল ২০২২, ০৭:২৩ এএম
ডলার সংকট এড়াতে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই উদ্যোগে ফলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের যেকোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ব্যাংকগুলোকে আগাম সতর্কবার্তা দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে আগাম তিন মাসে পণ্য আমদানির জন্য কী পরিমাণ এলসি খোলা হচ্ছে, এলসির দায় পরিশোধে কী পরিমাণ ডলার প্রয়োজন হবে তা ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয়া হবে।
ব্যাংকগুলো এ ধারণা অনুযায়ী আগাম পদক্ষেপ নিতে পারবে। একই সাথে ব্যাংকগুলোর এলসির দায় পরিশোধে তাদের কোনো ডলার সঙ্কট হবে কি না বা এ সঙ্কট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো সহায়তা লাগবে কি না তার চাহিদা এক মাস আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করতে হবে। এমন বার্তা ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো ডলার সংস্থান না করেই পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলে। আমদানির দায় যখন পরিশোধের সময় আসে তখন বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ছোটাছুটি করতে থাকে। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার সংস্থান করতে না পেরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে হাত পাতে।
এতে দুই ধরনের সমস্যা হচ্ছে। প্রথমত, বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল হয়ে যায়। কারণ অপরিকল্পিত এলসি খোলার কারণে বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় এলসি না থাকায় বাজার অস্থিতিশীল করে তোলে। তখন বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যায়। অপর দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বাজার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে তার রিজার্ভ থেকে বাধ্য হয়ে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করতে হয়। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিনই ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলারের জন্য আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে ৯ মাস ৭ দিনে (জুলাই-৭ এপ্রিল পর্যন্ত) কেন্দ্রীয় ব্যাংক সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে প্রায় ৪৩০ কোটি মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা। গত ৭ এপ্রিলও তিনটি ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করা হয়েছে ছয় কোটি মার্কিন ডলার, এর আগের দিন বিক্রি করেছিল ৯ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। এভাবে প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলারের জন্য হাত পাতছে ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এমনিতেই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি কাক্সিক্ষত হারে রফতানি আয় হচ্ছে না। বিপরীতে পণ্য আমদানি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। জুলাই জানুয়ারিতে আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ। বিপরীতে জুলাই ফেব্রুয়ারিতে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩০ শতাংশ। কিন্তু একই সময়ে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক প্রায় ২০ শতাংশ। সবমিলেই বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ চাহিদার তুলনায় কমে যাচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার চাপে রয়েছে। স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৮৬ টাকা ২০ পয়সা ডলারের মূল্য বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু ব্যাংকে লেনদেন হচ্ছে ৯২ টাকা পর্যন্ত। সামনে এ চাপ আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সামনে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোকে আগাম সতর্কবার্তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খুলে বাজার আরো অস্থিতিশীল না করে সেজন্য ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। একই সাথে প্রতি তিন মাসের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের আগাম বার্তা ব্যাংকগুলোকে দেয়া হবে। এ বার্তা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো যাতে তাদের চাহিদার বিপরীতে ডলার সংস্থান করতে পারে সে জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিন মাসে পণ্য আমদানির জন্য কি পরিমাণ এলসি খোলা হয়েছে, কী পরিমাণ ডলারের প্রয়োজন হবে সে বার্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে দেয়া হবে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর সংস্থান অনুযায়ী যেন এলসি খুলতে পারে সে জন্য তাদের কাছে এক মাসের আগাম চাহিদা চাওয়া হয়েছে। এতে এক দিকে ব্যাংকগুলো সতর্ক থাকতে পারবে বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে। ডলার সংস্থান না করেই পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার ব্যাপারে ব্যাংকগুলো সতর্ক হতে পারবে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, তাদের আয়ের একটি অন্যতম খাত হলো এলসি কমিশন। এলসি খুলতে পারলেই এলসি কমিশন বেড়ে যাবে। বাড়বে আয়। এ কারণে অনেক ব্যাংক প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান না করেই এলসি খুলে থাকে। এলসির দায় পরিশোধের সময় দেখা দেয় বিপত্তি। তখন ব্যাংকগুলো ডলারের জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে। এভাবে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে যায়।
একজন তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলারের দর বেঁধে না দিলে ও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করলে প্রতি ডলার ক্ষেত্র বিশেষ ১০০ টাকায়ও পাওয়া যেত না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অন্তত তিন মাসের আগাম পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারবে ব্যাংকগুলো।
একেবি