চট্টগ্রাম ব্যুরো
১০ জুন ২০২৩, ১২:৫৬ পিএম
চট্টগ্রামে পুকুর ও নলকুপের পানিতে মিলেছে ক্ষতিকর কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া ও কলেরার জীবাণু। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর এক পরীক্ষা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার (১০ জুন) সকালে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর, মোহরা, পাহাড়তলীসহ কয়েকটি এলাকা এবং পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা ও চন্দনাইশ উপজেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ফলে গত ৫ মে আইইডিসিআরকে বিষয়টি তদন্তের জন্য চিঠি দেওয়া হয়।
এর প্রেক্ষিতে সংস্থাটির ১২ সদস্যের একটি দল চট্টগ্রামে এসে মহানগরীর মোহরা, পটিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলায় সরেজমিনে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। এরমধ্যে বোয়াখালী উপজেলার পৌর সদর এলাকার পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়নের পাঁচটি পুকুর এবং ৩টি টিউবওয়েলের পানির নমুনা সংগ্রহ করেন। যা পরবর্তীতে আইইডিসিআর এর নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। গত বৃহস্পতিবার পরীক্ষার এই প্রতিবেদন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
আইইডিসিআর এর পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঁচটি পুকুরের মধ্যে পাঁচটিতেই মানবদেহের ক্ষতিকারক কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া এবং কলেরার জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এছাড়া তিনটি টিউবওয়েলের মধ্যে দুটিতে কলিফর্ম এবং একটিতে কলেরার জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।
এদিকে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) এর মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এ ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন আন্ত্রিক ভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কা তৈরি করে। কলিফর্ম মিশ্রিত পানি পানে ডায়রিয়া, আমাশয়, রক্ত আমাশয়, কলেরা, টাইফয়েড ছাড়াও ভাইরাল হেপাটাইটিস (জন্ডিস) রোগ হয়ে থাকে। তাই পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেলে সেই পানি কোনোভাবেই পান করা যাবে না। বিশুদ্ধ করে পানি পান করতে হবে। না হয় নানান ক্ষতিরমুখে পড়তে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলিফর্ম একটি ভয়ংকর ব্যাকটেরিয়া। এ ব্যাকটেরিয়া মিশ্রিত পানির কারণে মানুষের খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়ে থাকে। তাই পুকুরের পানি পান করার আগে অবশ্যই অবশ্যই বিশুদ্ধকরণ বা ফুটিয়ে পান করতে হবে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও মোহরা, সমশের পাড়া, ফরিদের পাড়া, হালিশহর, পাহাড়তলী, বায়েজীদ, বাকলিয়া এবং জেলার সবকটি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ সংসারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে এখনো ব্যবহার করছে পুকুরের পানি। এমনকি নলকূপের সংকটের কারণে বা শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে নলকুপে পানি না উঠলে পুকুরের পানি না ফুটিয়ে ছেঁকে পান করছে। যাদের বেশিরভাগই প্রায়ই ডায়রিয়া-কলেরাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে সারাবছর। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে পুকুর বা নলকুপের পানি অবশ্যই ফুটিয়ে খাওয়ার বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
টিবি