চট্টগ্রাম ব্যুরো
০৭ জুন ২০২৩, ১০:৫৪ পিএম
চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসনের (হালিশহর-ডবলমুরিং) সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমীন ইন্তেকাল করেছেন গত ২ জুন। এতে শূন্য হয় তার সংসদীয় আসনটি। সেই সুযোগে আসনটির উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে তৎপরতা শুরু করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের একঝাঁক নেতা। অথচ আর কয়েকমাস পরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবুও এই অল্পকয়েক মাসের জন্য সংসদ সদস্য হয়ে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করতে চান দলটির নেতারা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীরা জানান, ডা. আফসারুল আমীনের মৃতুর পর চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাদের মধ্যে প্রয়াত নেতার পরিবারের লোকজনও রয়েছেন। ফলে প্রয়াত নেতার স্বজনদের মধ্যে কেউ, নাকি তৃণমূলের ত্যাগী কোনো নেতা মনোনয়ন পাবেন তা নিয়ে চলছে গুঞ্জন।
স্থানীয়রা জানান, প্রয়াত সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমীনের ছোট ভাই এরশাদ আমীন ও ছেলে ফয়সাল আমীন মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের আরেক প্রয়াত নেতা এম এ আজিজের ছেলে সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার এই আসনের উপ-নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যদি আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেওয়ার পরিকল্পনা নেয়, তাহলে ফয়সাল ও সাইফুদ্দিনের মধ্যেই মনোনয়ন লড়াই হবে। কারণ চট্টগ্রাম মহানগরের রাজনীতির দুঃসময়ে এই দুইজনের পিতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
দলীয় নেতাকর্মীরাও মনে করছেন, এই আসনে ডা. আফসারুল আমীনের ক্লিন ইমেজকে কাজে লাগাতে তার বড় ছেলে ফয়সাল আমীনকে মনোনয়ন দিতে পারে। আবার তার ভাই এরশাদ আমীনকে মনোনয়ন পাইয়ে দিতেও নগর আওয়ামী লীগের একটি অংশের আগ্রহ আছে। তবে চট্টগ্রামের অনেক নেতার সন্তানদের মূল্যায়ন করা হলেও এম এ আজিজের ছেলেদের মূল্যায়ন করা হয়নি। নগর আওয়ামী লীগের সদস্য হওয়া ছাড়া রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থাকা সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার সরকারের অংশ হতে পারেননি।
মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার এ প্রসঙ্গে বলেন, উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতির যে বলয় সেটি থেকে ভিন্নভাবেই রাজনীতি করেছি। আমার পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্য থাকলেও আমি এর বাইরে গিয়ে সংগঠনের নানা কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলাম। ২২ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। তফসিল ঘোষণার পর দলীয় ফরম সংগ্রহ করবো। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত।
প্রয়াত সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমীনের পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে বড় ছেলে ফয়সাল আমীন মনোনয়ন চাইবেন। পিতার অসুস্থতার সময় ফয়সালই মূলত রাজনীতির বিষয়গুলো দেখভাল করতেন।
এছাড়া তৃণমূলে রাজনীতি করেছেন এমন নেতাদের মধ্যে মনোনয়ন চাওয়া নিয়ে আলোচনায় আছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, মহানগর যুবলীগের সাবেক আহব্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু ও যুগ্ম-আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ বলেন, আমি মাঠের রাজনীতি করেছি। মাঠের রাজনীতি করা সবার একটি আকাঙ্ক্ষা থাকে। আমি সে মোতাবেক মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অভিপ্রায়ে এবারও দলের মনোনয়ন চাইবো। নেত্রী মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো।
এদিকে ২০১০ সালে বিএনপি থেকে সিটি মেয়র নির্বাচিত হওয়া আওয়ামী লীগ ঘরানার মনজুর আলমও মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ দৌড়ে সামিল হতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অবঃ) এমদাদুল ইসলামও তৎপর আছেন। তবে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পরেই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে।
সূত্র জানায়, গত ৫ জুন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করলেও চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী হওয়া নিয়ে কোনো কথা বলেননি। নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকলেও প্রধানমন্ত্রীও আলাদাভাবে এই আসন নিয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি।
আবার নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনও হজে যাচ্ছেন। যে কারণে এই দুই নেতাকে নিয়ে আলোচনা থাকলেও তারা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে তেমন তদবির করছেন না। বিষয়টি স্বীকার করে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে আমি কোনো কথা বলব না। তিনি যাকে যোগ্য মনে করেন তাকেই মনোনয়ন দেবেন। একই কথা বলেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনও।
নেতাকর্মীদের ভাষ্য— মনোনয়ন আলোচনায় থাকা সিনিয়র নেতাদের একটি অংশ নীরবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের নজরে আসতে চাইছে। অন্য অংশটি ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন। দলীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো উপস্থাপন করছেন সংসদীয় এলাকায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, গত কয়েক বছরে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী চমক দিয়েছেন। সর্বশেষ চট্টগ্রাম-৮ আসনেও নোমান আল মাহমুদকে মনোনয়ন দিয়ে চমক দিয়েছেন। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম-১০ আসনেও চমক দিতে পারেন। সরকার ক্ষমতায় থাকায় এই আসনে যে কাউকে মনোনয়ন দিয়ে পরীক্ষা চালাতে পারেন। যদিও এখনও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা গোপনে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
প্রতিনিধি/এইউ