images

সারাদেশ

ভেড়ামারায় আ.লীগ অফিসে যুবলীগের হামলা, আহত ২

জেলা প্রতিনিধি

০৩ জুন ২০২৩, ০২:১৩ পিএম

images

জেলার ভেড়ামারায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে যুবলীগ কর্মীরা। এসময় অফিসে থাকা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করা হয়। এছাড়াও হামলায় রামদার কোপে ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ এক কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।

শুক্রবার (২ জুন) রাত সাড়ে ৭টার দিকে ধরমপুর ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া গো-হাট সংলগ্ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালায় যুবলীগের একপক্ষের কর্মীরা। এঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আদিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে রাত সাড়ে ৭টার দিকে সাতবাড়িয়া মন্ডল পাড়ার যুবলীগের একটি গ্রুপ স্থানীয় যুবলীগ সদস্য শাহিন, জিদান, নাইম, রাসেল, রাজিব আরিফ, আবুলের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ জন সাতবাড়িয়া গো-হাট সংলগ্ন আওয়ামী লীগের অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।

অফিসের ভেতরে থাকা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করে নিচে ফেলে দেয়। টেবিল চেয়ার ও গ্লাস ডোর ভাংচুর করা হয়।

এর আগে সন্ধ্যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য রাহিদুল ইসলাম বুদু (৫৫) ও সুলতান হোসেনকে (৪০) হামলাকারীরা কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদের মাথায় রামদা দিয়ে কোপ দেওয়া ছাড়াও পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

পরে আহত দু’জনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। দুই পক্ষের লোকজন পাল্টা-পাল্টি হামলার প্রস্তুতি নিয়ে দু’দিকে অবস্থান নেয়। পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনা স্থলে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, চা দোকানদার গাদন প্রামানিক বলেন, ৩০ থেকে ৩৫ জন হামলাকারী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র রামদা, কিরিচ, দা হাতে নিয়ে এ হামলা চালায়।

তারা এসেই ককটেল বোমা ছুড়ে। অফিসের চেয়ার টেবিল, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর করে ছুড়ে ফেলে। পরে আমার চায়ের দোকান ভাংচুর করে গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলা নিয়ে চলে যায়। হামলাকারীরা সবাই  যুবলীগের কর্মী।

স্থানীয় যুবক সবুজ আহমেদ বলেন, প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জন এসে প্রথমে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে বোমা ছুড়ে। পরে আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর করে এবং চেয়ার টেবিল ভাংচুর চালায়।

এর আগে আওয়ামী লীগ নেতা রাহিদুল ইসলাম বুদু মেম্বার ও সুলতানকে পাশে ফুটবল খেলার মাঠে গিয়ে তাদের পেয়ে কুপিয়ে আহত করে। হামলাকারীরা সবাই বিভিন্ন সময় বিএনপি থেকে যোগদানকারী বর্তমানে যুবলীগ কর্মী। এক যুবলীগ নেতার আশ্রয়ে ও নির্দেশে চলাফেরা করে আর মাঝে মধ্যেই মানুষজনকে মারধর ও হামলা করে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও বর্তমান সদস্য শরিফুল ইসলাম নবাব বলেন, হামলাকারীরা অস্ত্র নিয়ে এ হামলা চালায়। তাদের হামলায় এক ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য রহিদুল ইসলাম বুদু ও কর্মী সুলতান আহত হয়েছে। তাদের মাথায় রামদার কোপ লেগেছে। দুজনকেই মুমূর্ষু অবস্থায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও  নামধারী অবুপ্রবেশকারী এসব যুবলীগের কর্মীরা আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালায়। 

এসময় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর করে। হামলাকারীরা স্থানীয় যুবলীগ নেতা আব্দুল আজিজের ক্যাডার বাহিনী। তারা বিএনপি থেকে বিভিন্ন সময়ে থেকে যুবলীগ নেতা আজিজের হাত ধরে যোগদান করেন। হামলাকারীদের আশ্রয় দাতাসহ এসব সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায়  নিয়ে আসার জোর দাবি জানাচ্ছি। মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।

ধরমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান শাহাবুল ইসলাম লালু বলেন, এসব হামলাকারীরা একসময় বিএনপির ক্যাডার ছিল। যুবলীগের এক নেতার হাত ধরে দলে অনুপ্রবেশ করেছে। এরা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। হামলা-অশান্তি সৃষ্টি করেই চলেছে। আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা ও বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর করার স্পর্ধা দেখিয়েছে। দ্রুত এদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে ধরমপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হামলার সঙ্গে জড়িতরা কেউই আমার লোকজন নয়।

শুনেছি গানের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রাজু নামের একজনকে বৃহস্পতিবার বিকেলে মারধর করে আহত করে। তারাই এর জের ধরে এ হামলা চালিয়েছে। এরা আমার লোকজন এ কথা বলে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাচ্ছে। একটি পক্ষ আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করছে।

ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।

প্রতিনিধি/এসএস