জেলা প্রতিনিধি
০২ জুন ২০২৩, ০২:৫৮ এএম
চা বাগান অধ্যুষিত জেলা মৌলভীবাজারে গত কয়েকদিন ধরে তীব্র গরমের দাপটে নাজেহাল জনজীবন। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছে এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া ও দিনমজুর মানুষজন।
আর এই তাপদাহে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে হিট স্ট্রোকে দুই নারী চা শ্রমিক মারা গেছেন এবং ১০ থেকে ১২ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
গত কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেও বাগান মালিকেরা মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকদের ২ থেকে ৩ শিফটে কাজ করাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চা শ্রমিকেরা উঁচু টিলায় কাজ করার কারণে সূর্যের তাপ সরাসরি তাদের মাথায় এসে পড়ে। গত বুধবার (৩১ মে) রাতে কমলগঞ্জের ডানকান ব্রাদার্স শমশেরনগর বাগান ফাঁড়ির দেওছড়া বাগানের চা শ্রমিক ইন্দ্রা দ্বিবেদী (৫০) ও সঞ্জিতা রবিদাস (৩০) নামে দুই নারী হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন।
তারা তিন শিফটে কাজ করে অসুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেন। পরে রাতে তাদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অন্যজন বাড়িতেই মারা যান।
এছাড়া দেওছড়া চা বাগানে ৪ জন, শমশেরনগর চা বাগানে ৩ জন, চাতলাপুর চা বাগানের ১ জন, আলীনগর চা বাগানে ২ জনসহ বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকেরা হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যায়।
চা শ্রমিকেরা বলেন, ‘গরমের মধ্যে কাজ করে আমাদের অনেকেই অসুস্থ হচ্ছেন। আমাদের পায়ে নেই জুতা আর মাথার ওপর সূর্য। এক সঙ্গে নিচ ও ওপর থেকে গরম লাগে। গরম কিংবা ঝড়বৃষ্টি হলেও আমাদের সময়মতো কাজে আসতে হয়। এক দুই শিফটে কাজও করতে হয়। কাজ না করলে খাবো কি।’
চা শ্রমিক নেতা শিতারাম বিন বলেন, ‘তীব্র গরমে দুই চা শ্রমিক হিট স্ট্রোক আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়াও অনেক আক্রান্ত হয়েছেন। এই গরমের মধ্যেও চা শ্রমিকদের একাধিক শিফটে কাজ করানো হচ্ছে। তাদের সকাল ও বিকেলে কাজ করার সুযোগ করে দিলে ভালো হতো। চা শ্রমিকেরা পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের দিক থেকে এমনিতেই অনেক দুর্বল। অতি সহজেই তারা হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়।’
হিট স্ট্রোকে চা শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে শমশেরনগর চা বাগানের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। শ্রমিকেরা যদি সকালে কাজে আসে তাতেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
এব্যাপারে শমশেরনগর ক্যামেলিয়া ডানকান হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: বাহা উদ্দিন বলেন, 'গত বুধবার রাতে আমাদের কাছে মৃত অবস্থায় একজনকে নিয়ে আসা হয়েছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।'
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম ভূইয়া বলেন, ‘হিট স্ট্রোকের ভয়াবহতা সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষ সচেতন নয়। হিট স্ট্রোক হলে দ্রুততম সময়ে বিপদ ঘটতে পারে। এ সময় শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাই শিশু থেকে বয়স্ক সবাইকে গরমে সতর্ক থাকতে হবে। সচেতন হতে হবে।'